রাজনৈতিক অধিকারসহ রেড জোনে ১৭ সূচক
অনলাইন নিউজ ডেক্স
এবারও যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের অনুদান পাচ্ছে না বাংলাদেশ। কারণ এ ফান্ড পাওয়ার জন্য যেসব স্কোর গ্রিন জোনে থাকা প্রয়োজন তার অধিকাংশ এখনো রেড জোনে। রেড জোনে থাকা গতবারের ১৭টি সূচক থেকে বাংলাদেশ এ বছরও উন্নতি করতে পারেনি। ৭ নভেম্বর এ সংক্রান্ত ‘বাংলাদেশ স্কোর কার্ড-২০২৪’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)। অথচ ভারতসহ এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে এ স্কোরে এগিয়ে রয়েছে। ২০টি স্কোরের মধ্যে নেপালের অবস্থান ১৮টি গ্রিন জোনে। এছাড়া রেড জোনে রয়েছে ভুটানে ৪টি, ভারতে ৮টি, শ্রীলংকায় ৯টি, পাকিস্তানে ১১টি এবং মিয়ানমারের ১৬টি সূচক। রেড জোনে রয়েছে পাকিস্তানের ১১টি, নেপালের ২টি, শ্রীলংকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সূত্রগুলো দাবি করছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর চেষ্টা করার পর এখন হাল ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। এ ব্যাপারে কারও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ এটি শুধু অনুদান পাওয়ার বিষয় নয়, দেশের ইমেজেরও প্রশ্ন।
ইআরডির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। কিন্তু এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করে সংস্থটি স্বাধীনভাবেই এ প্রতিবেদন তৈরি করে। সেখানে আমাদের কি করার আছে। তবুও আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি কিছু করা যায় কিনা।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০২২ সালে মূল্যায়ন করা মোট ২০টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬টি সূচক ছিল রেড জোনে। এছাড়া ২০২১ সালে এই জোনে ছিল ১৩টি, ২০২০ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে ছিল ১১টি এবং ২০১৮ সালে ছিল ৭টি সূচক।
জানতে চাইলে ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বৃহস্পতিবার বলেন, এ বিষয়টির সঙ্গে অনেকটাই রাজনীতি যুক্ত রয়েছে। স্কোর উন্নতিতে ইআরডির তেমন কিছুই করার থাকে না। কেননা এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে পারে। এছাড়া আমাদের দেশে সুশাসনের অভাব তো আছেই। এখন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সেক্ষেত্রে এই সরকার যদি স্কোরের উন্নতি হোক সেটি আন্তরিকভাবে চায় তাহলে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। এক্ষেত্রে যেসব সূচক লাল তালিকায় আছে সেগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। সত্যিই সেগুলো লাল হওয়ার যোগ্য কিনা। এ বিষয়ে যদি সরকারের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থাকে তাহলে এমসিসির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। আমরা বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারি এবং নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। তাহলে এখানে কেন করা যাবে না। এক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকায়ও নতুন সরকার আসছে এ দেশেও নতুন সরকার। ফলে স্কোরের উন্নতির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের স্কোর কার্ডে রেড জোনে থাকা সূচকগুলো হচ্ছে, পলিটিক্যাল রাইটস (রাজনৈতিক অধিকার), কন্ট্রোল অব করাপশন (দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ) এবং জমির অধিকার ও প্রাপ্যতা। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা, বাণিজ্য নীতিমালা, ফ্রিডম অব ইনফরমেশন (তথ্যের স্বাধীনতা), অর্থনীতিতে নারী ও পুরুষের সমতা, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়, প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি ব্যয়, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, আইনের শাসন এবং সরকারের কার্যকারিতা। আরও আছে ঋণ প্রাপ্তি, কর্মসংস্থানের সুযোগ, বেসমারিক লোকের স্বাধীনতা, মেয়ে শিশুর প্রাথশিক শিক্ষা সমাপ্ত করার হার এবং শিশু স্বাস্থ্য। অপরদিক গ্রিন জোনে থাকা সূচকগুলো হলো-রাজস্ব নীতি, মূল্যস্ফীতি এবং টিকা দেওয়ার হার।
ইআরডি সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ড গঠন করে এবং এটি পরিচালনার জন্য ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)। এই ফান্ড গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এমসিএফ এর আওতায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচিত দেশগুলোকে সহায়তা করে থাকে। এর একটি হচ্ছে থ্রেসহোল্ড কান্ট্রি বা কম অঙ্কের সহায়তার দেশ। এই প্রোগ্রামের আওতায় সাধারণত ১০ কোটি থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। অন্যটি হচ্ছে কমপ্যাক্ট অর্থাৎ বড় অঙ্কের সহায়তা। এর আওতায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। এই ফান্ডের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যুক্ত করতে প্রতিবছর বৈঠক করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)। কোনো দেশকে মূল্যায়নের জন্য প্রথমদিকে ১৭টি নির্দেশক থাকলেও সর্বশেষ ২০১২ সালে নতুন নির্দেশকসহ মোট ২০টি নির্দেশক যুক্ত করা হয়। ওই বছরই প্রথমবারের মতো মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। সে সময়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরের সময় ওই ফান্ডে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাকে অনুরোধ জানানো হয়। পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে অংশ নিয়েছিল সরকারের প্রতিনিধিও। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিবছর বাংলাদেশের পার্টনারশিপ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। এর মধ্যে এমসিএফ-এর বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে টেকনিক্যাল টিম পাঠাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু টেকনিক্যাল টিম পাঠানো হলেও চ্যালেঞ্জ ফান্ডে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি আর এগোয়নি।
এক সময় এ বিষয়ে কাজ করা ইআরডির সাবেক অতিরিক্ত সচিব (সরকারের সাবেক সচিব) আরাস্তু খান এর আগে বলেছিলেন, এটি নির্ভর করে অনেকটাই রাজনীতির ওপর। ইআরডি সরাসরি স্কোরের উন্নতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। এছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ কার্যক্রম দরকার।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।