রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ‘আগস্ট অভিশাপ’ দেখছেন রুশরা


অনেক আগে আগস্ট মাসকে অভিশাপ হিসেবে দেখতেন রুশ নাগরিকরা। তাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা, সন্ত্রাসী হামলা বা যুদ্ধের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে আগস্টে অনেকটা ফিসফিস করে কথা বলতেন তারা। দীর্ঘদিন সেই ‘অভিশাপ’ প্রায় ভুলেই ছিলেন রুশরা। কিন্তু এ বছর তাদের মনে হচ্ছে, ‘আগস্ট অভিশাপ’ ফিরে এসেছে। সম্প্রতি রাশিয়ায় পাল্টা হামলা বাড়িয়েছে ইউক্রেন। মস্কো ও ক্রেমলিনে একের পর এক ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে। কিয়েভের এমন আক্রমণে আতঙ্কে রাশিয়ানরা। তারা বলছেন, যুদ্ধ ক্রেমলিনের ঘরে ঢুকে পড়েছে। মস্কোকে এর মূল্যও দিতে হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যে ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হয়েছিল, তার স্বাদ এখন পাচ্ছেন রাশিয়ার সাধারণ মানুষ। এ মাসে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার সামরিক ও বাণিজ্যিক নৌবহরগুলো ইউক্রেনীয় নৌ ড্রোনের আক্রমণের শিকার হয়েছে, যা রুশ সরবরাহ ও বাণিজ্য রুটকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আগস্টে এখন পর্যন্ত প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, মস্কোর সরকারি ভবন, সামরিক স্থাপনা বা বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে ছোট আকারে কিন্তু অবিরাম ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। রুশ কর্মকর্তাদের দাবি, শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা বেশির ভাগ হামলা আকাশেই প্রতিহত করা হয়েছে। এরপরও বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৪০টি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ২০টি ব্যক্তিগত বাড়িতে হামলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮৪টি গাড়ি। প্রাণ হারিয়েছেন একজন, আহত ৮৪ জন এবং কমপক্ষে আটজন এখনও নিখোঁজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী মস্কোর স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে যা ঘটছে তা দেখে আমরা হতবাক। তবে আমরা রাজনীতিবিদ নই, তাই এসব নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’ ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর ভিন্নমত দমনে, বিশেষ করে যুদ্ধের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছে রুশ সরকার। এ কারণে ওই নারীর মতো অনেকেই কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনীগুলো ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ইউক্রেনের পাঠানো ২০টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। গতকাল শনিবার এ হামলাচেষ্টার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। টেলিগ্রাম অ্যাপে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ১৪টি ড্রোন ধ্বংস করেছে এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করে অন্য ছয়টি ধ্বংস করা হয়েছে। হামলার লক্ষ্য কী ছিল, তা স্পষ্ট নয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির আগে ক্রিমিয়ার রুশপন্থি গভর্নরের উপদেষ্টা সের্গেই ক্রুচকোভ জানিয়েছিলেন, বিমান প্রতিরক্ষা পদ্ধতি উপদ্বীপের বিভিন্ন অংশে আকাশপথে চালানো হামলা প্রতিরোধ করে চলেছে। ক্রিমিয়ার পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে, রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে সংযোগকারী ক্রিমিয়া সেতু স্থানীয় সময় রাত ১টা ৩০ মিনিট থেকে পরবর্তী প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এদিকে চলমান যুদ্ধের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে সামরিক নিয়োগের দায়িত্বে থাকা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সব আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তিনি এসব কর্মকর্তাকে বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেন, ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে এবং সব আঞ্চলিক সামরিক নিয়োগ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত থাকার মধ্যে এই পদক্ষেপ সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করার একটি উদ্যোগ। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আছে এবং গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা যাচাই করা হয়েছে এমন কর্মকর্তাদের এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। খবর: সিএনএন ও আলজাজিরার।