রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: ব্যয়বহুল ও অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিন


উচ্চমূল্যের ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ছয়টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। তীব্র ডলার সংকটের এই সময়ে এ ধরনের পদক্ষেপ মোটেই কাম্য নয়। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের খরচ হয় ১৬ থেকে ১৮ টাকা। এর প্রভাব পড়ে গ্রাহক পর্যায়ে। বস্তুত রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়াই সমীচীন। আপৎকালীন সময় তথা ২-৩ বছরের জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলেও দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ না নিয়েও বিপুল অঙ্কের টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা, যার বেশিরভাগই গেছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালন ব্যয়ের পেছনে। বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার জন্য মূলত এই ক্যাপাসিটি চার্জই দায়ী। উৎপাদন না করলেও টাকা পরিশোধ করার বিষয়টি সাধারণ যুক্তিতে মেনে নেওয়া কঠিন। প্রশ্ন উঠেছে, এ বিশাল অঙ্কের টাকা গুটিকয় মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার অধিকার কোনো সরকার রাখে কিনা। আমরা মনে করি, বিদ্যুৎ খাতে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে ইতোমধ্যেই সরকারকে বড় ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। এ ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা আর বহন করা উচিত নয়। বস্তুত এ অর্থ জনগণের। জনগণের অর্থ যাতে জনগণের ওপরই আরও বেশি বোঝায় পরিণত না হয়, সেজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার চুক্তি থেকে সরকারের বের হয়ে আসা উচিত। মেয়াদ শেষ হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে আর চলতে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভাড়াভিত্তিক ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এরপরও কেন এসব কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে, সেটা এক বড় প্রশ্ন। পিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক রাখতে এ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আসার আগেও গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ছিল। মূলত সরকার সমর্থিত বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের খুশি করতেই উল্লিখিত ছয়টি রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এগুলোর মেয়াদ না বাড়িয়ে সরকারকে প্রমাণ করতে হবে এ অভিযোগ সত্য নয়।