শান্ত থাকুন, প্রতিশোধ পরায়ণ হবেন না: তারেক রহমান


আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার রাতে দেশবাসীর উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। সুতরাং বিজয়ের আনন্দঘন সময় রাহুমুক্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। অর্জিত বিজয় যাতে লক্ষ্যচ্যুত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখুন। বাংলাদেশের সাহসী ছাত্র-জনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ’৫২, ’৭১ কিংবা ’৯০-এর মতো ছাত্র-জনতা আবারও একটি বিজয়ের ইতিহাস রচনা করেছে। গৌরবজনক ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে হাজারো শহিদের প্রাণের বিনিময়ে জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার পতন হয়েছে। রাহুমুক্ত হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। জনতার বিপ্লবের প্রথম ধাপ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। লাখো শহিদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানতে পারে না। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই বাংলাদেশকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারবে না।’ তারেক রহমান বলেন, ‘বিজয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তে আজ সেইসব মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, এই গণবিপ্লবে যারা তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। এভাবে গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালে অনেক সন্তান তার প্রিয়তম পিতা হারিয়েছেন, অনেক স্ত্রী প্রিয়তম স্বামী হারিয়েছেন, গুম-খুন-অপহরণ করে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করে দেওয়া হয়েছে। সন্তানের শহিদি মৃত্যু স্বজনদের ত্যাগ তিতিক্ষায় ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ।’ ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব সফল করতে গিয়ে অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। বাসায়, হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন যন্ত্রণাবিদ্ধ সময়ে সব ভালোবাসা নিয়ে আপনাদের পাশে আজ সারা বাংলাদেশ। খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ মিথ্যা মামলা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের কারামুক্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা যাতে আবার স্বাভাবিকভাবে হলে, ক্লাসে ফিরতে পারে এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে, সরকার সবার আগে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। গণহত্যাকারী, খুনি সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। এর মধ্য দিয়ে জনগণের বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেদিন দেশের সাড়ে ১২ কোটি ভোটার নিরাপদে নিশ্চিন্তে ভোট দিয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে রাষ্ট্র-সরকার-শাসন-প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, সর্বোপরি একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়তে পারবে তখনই জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের চূড়ান্ত সফলতা আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাই যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপিসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সব রকমের সহযোগিতা করবে।’ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছি -মির্জা ফখরুল : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসন করা হয়েছে। তিনি প্রতি মুহূর্তে এই আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকেও দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইনশাআল্লাহ সেটা আমরা সফল হবো। সবাই ধৈর্য্য ধরুন, শান্ত থাকবেন।’ সোমবার রাতে বঙ্গভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু তাদের ওপর যেন কোনো আক্রমণ না হয়। তাদেরকে রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। তাই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাতে চাই, সবাই নেমে পড়ে দেশকে রক্ষা করুন। কাউকে সেই সুযোগ নিতে দেবেন না, যে সুযোগে দুর্বৃত্তরা ও দুষ্কৃতরা অন্যের ওপরে আঘাত হানবে। আসুন জাতির এই ক্রান্তিলঘ্নে আমাদের সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করব। একই সঙ্গে আমরা নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে রক্ষা করব।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সব অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই ঐক্যকে দৃঢ় করে রেখে শত্রুদের হাত থেকে অবশ্যই দেশকে রক্ষা করব। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সবার কাছে সেই আবেদন করেছেন, ধৈর্য্য ধরুন, শান্ত হন, দেশকে রক্ষা করে জাতিকে রক্ষা করুন। আজকে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেই উদ্যোগকে সফল করুন।’ এ সময় অছাত্র নেতা ও সমন্বয়কারী এবং যারা আন্দোলনে শরিক হয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানান বিএনপি মহাসচিব।