শুষ্ক মৌসুমেও দক্ষিণখানের সড়কে পানিবদ্ধতা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি না থাকলেও রাজধানীর দক্ষিণখানে সড়কের উপর ময়লা পানির ঢেউ দেখে মনে হবে বর্ষাকাল। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণখান বাজার শ্যামলবাগ এলাকা ও আজমপুর কাঁচাবাজার সিএনজি পাম্প এলাকার প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশায় প্রতিনিয়ত চলাফেরায় দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই বছর যাবৎ ময়লা পানি জমে থাকায় এ সড়কের অন্যান্য অংশের সলিং উঠে গিয়ে চলাচলে অযোগ্য হয়ে উঠেছে। রিক্সা আরোহী বীর মুক্তিযোদ্ধ আবু তাহের ভান্ডারী জানান, তার আত্মীয় সজন উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় বেশী থাকে, কয়েক দিন পর পর তাদের বাসায় এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়। সুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের হই, কিন্তু রাস্তায় রিক্সার ঝাঁকিতে শরীরের সকল অঙ্গের ব্যাথায় নতুন করে অসুস্থ হয়ে যাই। তিনি বলেন, উত্তরখান-দক্ষিণখানের বিভিন্ন সড়কে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুরির কারণে সৃষ্ট যানজটে অসুস্থ রুগিকে হাসপাতালে নিতে দশ মিনিটের রাস্তা কখনো কখনো এক ঘন্টা লেগে যায়।
এছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত সড়কে বিরম্বনার স্বীকার হতে হয়। সড়কে জমে থাকা ময়লা পানিতে কখনো কখনো জামা-কাপড় নষ্ট করে কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়।
জানা যায়, এ আসনের এমপি খসরু চৌধুরী সড়কের উপর জমে থাকা পানি নিষ্কাসনে বার বার তাগিদ দিলেও কর্ণপাত করছে না সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়ে ৪৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আলী আকবর বলেন, আমার ওয়ার্ডে রয়েছে ৫০টির মতো বড় বড় গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরিসহ শতাধিক ছোট ছোট বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানা। এ সকল ফ্যাক্টরিতে কাজ করে হাজার হাজার শ্রমিক। তাদের কষ্টের সীমা নেই, সকাল-সন্ধ্যা ময়লা পানিতে কাপড় চোপড় নষ্ট করেই কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করে। পানিবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। মাহে রমজানের আগে ড্রেনের ময়লা ও বালি পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনে আরো বেশি শ্রমিককে কাজে লাগালো হবে।
জানা যায়, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি খসরু চৌধুরী গত ১৪ জানুয়ারি আজমপুর কাঁচাবাজার সিএনজি পাম্পের সামনে রাস্তায় জমে থাকা পানি নিষ্কাসনে সিটি কর্পোরেশন খরচ বহন না করলে ও তিনি তার নিজ অর্থায়নে এ সড়কের সংস্কার ও পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেওয়ার পর প্রতিদিন জাগ মোটর দিয়ে পাইপ লাগিয়ে সড়কের পানি সরানোর হচ্ছে। স্থানীয়রা বলেন, এভাবে আর কতদিন চলবে! দিনের বেলায় মেশিন দিয়ে পানি সরালেও রাতের বেলায় আবার সড়কে পানি জমে একাকার হয়ে উঠে। এ সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ এই দুর্ভোগ থেকে দ্রুত মুক্তি চায়। তারা এ সংকট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জোন-৮ এর সহকারী প্রকৌশলী (পুর) অতিঃদায়িত্ব আব্দুল মজিদ মোহাম্মদ নাঈম বলেন, এই দুইটি স্থানে জমে থাকা পানি সরানো নিয়ে তারা দফায় দফায় কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, এটি মেগাপ্রকল্পের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে ড্রেনের পাইপ লাগানো থেকে রাস্তা ঘাট পর্যন্ত এসব কিছু করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি, বাসা বাড়ী পানি ও বিভিন্ন কলকারখানার পানি চলাচলের ড্রেন লাগানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনগণের একটু কষ্ট হবে। সিটি কর্পোরেশন কি কোন দায় নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে আমরা নিজেরাও চাপে রয়েছি সেকারণে দ্রুত কাজ সম্পাদন করতে তারা সেনাবাহিনীকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে অবগত করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরখান থেকে উত্তরা আজমপুর ও দক্ষিণখান থেকে মাজার চৌরাস্তা আসা যাওয়ার প্রধান সড়ক হওয়ায় এই সড়কে প্রতিদিন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ চলাচল করে। এই সড়কের আজমপুর কাঁচাবাজার এলাকা থেকে সিএনজি পাম্প চৈতী গার্মেন্টস পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় বছরব্যাপি হাটু পানি জমে থাকে। ফলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট।
৫০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডিএম শামীম বলেন, এ সমস্যা সমাধানে মেয়র মহোদয় পর্যায়ক্রমে তিন বার এগিয়ে এসেছে, একই ঘটনায় সাবেক এমপি মো. হাবিব হাসান ৭/৮ বার এসেছে। আমরা ওনাদের সহযোগিতা নিয়ে এ সড়কের পানি নিষ্কাসন করতে বহুমুখি চেষ্টা চালিয়েছি। সর্বশেষ তারা ঢাকা-১৮ আসনের নবনির্বাচিত এমপি খসরু চৌধুরীর সাথে পরামর্শ করে জগমোটর লাগিয়ে পানি সরানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ড্রেনের কাজ চলছে এটি হয়ে গেলেই স্থায়ী সমাধান হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।