শ্রীপুরে অবৈধ বালু উত্তোল হুমকির মুখে অর্ধশতাধিক পরিবার


মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গঙ্গারামখালী গ্রামের মালোপাড়া ও বিশ্বাসপাড়ার অর্ধ-শতাধিক পরিবারের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ১৫টি পরিবারের সব বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি। অবৈধভাবে বসতি স্থাপন ও এলাকার নিকটবর্তী গড়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার। এ ঘটনায় এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী শুকুমার ও সুবোধ বলেন, নদী ভাঙন রোধ করার জন্য ‘আলিয়ার রহমান’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিও ব্যাগ দেয় আবার তারাই কিছুদিন আগে বসতি এলাকার নিচ থেকেই আগে বালু উত্তোলন করে। সে সময় তাদের দূর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বলা হলেও তারা তা তোয়াক্কা না করে সেখান থেকেই বালু নিয়ে যায়। ‘গত কয়েকদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘর ও উঠানে ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। ১৯ জানুয়ারি থেকে দিনরাত এক একটা ঘর, গাছপালা নদীর মধ্যে ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুম এলেই এ ভাঙনে পুরো গ্রাম নদীর নিচে চলে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এদিকে মালো পাড়া ও বিশ্বাসপাড়ার বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, দিলীপ, মধুসূদন, নারায়ণ, সঞ্জিত, বৈকুণ্ঠ, নিখিল, সরজিৎ, নীরোদের বাড়ি-ঘর ও গাছপালা সব নদীর মধ্যে চলে গেছে।’ স্থানীয়রা বলেন, ফাটল ধরেছে অমরেশ, বিনয়, উজ্জ্বল, কালাচাঁদ, অমল, রবি, শ্যামল, সুবোল, তপন, গোপাল, কৃষ্ণ, অসিত, মনজিৎ, বিশ্বজিৎ, শৈলেন, সাধন, অচিন্ত্য, সুভাষ, রমেশ, শ্রীকান্ত, আনন্দ, হারাণসহ প্রায় ৫০টির উপরে পরিবারের বাড়ি-ঘর, গাছপালা ও চাষের জমি। এ নিয়ে আমরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। চৌদ্দ পুরুষের বসতভিটা চোখের সামনে নদীর পেটে চলে যাচ্ছে, কিছুই করতে পারছি না। আমরা বারবার ঠিকাদার ও প্রশাসনের লোকজনকে জানালেও তারা কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। তবে সংবাদ পেয়ে গত শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে ঠিকাদারের প্রতিনিধি এরশাদ জানান, তারা বাঁধের কাজে ব্যবহারের জন্য বালু উত্তোলন করেছেন। কিন্তু তাদের ধারণা ছিল না বিষয়টি এমন হবে। এভাবে পাড়ের মাটি ধসে পড়বে। স্থানীয় দ্বারিয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সবুর বলেন, কাজটি ঠিকাদার মোটেই ভালো করেননি। এখানে অনেক পরিবার সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সাধ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। নতুন করে জিও ব্যাগ দেওয়া হবে। যারা ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।