শ্রীপুরে পুষ্টি বাগান পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক পরিবারে এনেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা


মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান কৃষিতে এনেছে এক নতুন দিগন্ত। প্রথমে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এ বাগান করা হলেও বাড়তি সবজি বিক্রি করে আয়ও হচ্ছে। শ্রীপুর উপজেলায় কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত ও পরিবারের নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণে গড়ে তোলা হচ্ছে এ বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পে’র আওতায় মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বাগান। ইতোমধ্যে এসব বাগান থেকে শাকসবজি আহরণ করে উৎপাদিত সবজি দিয়ে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আয়ও করছেন। শ্রীপুর কৃষি অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, উপজেলায় বাছাইকৃত তালিকাভুক্ত পরিবার থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে প্রথমে দু’দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় দেড় শতক জমিতে নান্দনিক বেড়া দিয়ে পুষ্টি বাগানের প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়। বাগানের মডেল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন একজন কৃষক সারাবছরই এখান থেকে কিছু না কিছু ফসল পান। কখনো সবজি থাকবে, আবার কখনো থাকবে ফল। বীজ, সার, চারাসহ যাবতীয় ব্যয় সরকারের তরফ থেকে বহন করা হচ্ছে। কৃষাণ-কৃষাণী শুধু পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি বাগানে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পাঁচটি ও দুই মাথায় দুটি বেড রয়েছে। এছাড়া দুই পাশে মাচা রয়েছে। বেডে লাগানো হচ্ছে শাক-সবজি ও মাচায় লাউ-কুমড়া-সিম-বরবটি-ঝিঙা। তাছাড়া দুই মাথায় নিটি করে ছয়টি ফল ও মসলার চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও ফলের চারা বাগানের বাইরে অন্যত্র লাগানো হয়েছে। শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, পাতাকপি, টমেটো, লাল শাক, গীমা কলমি, পুঁইশাক, ডাটা শাক, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ, গাজর ও মুলা। ফলদ ও মসলা উৎপাদনে থাই পেয়ারা, কদবেল, ছফেদা, বাতাবী লেবুর চারা লাগানো হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রোগ ও পোকা থেকে রক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে ও সরেজমিন খোঁজ নিয়ে সার্বিক সহায়তা করছেন। শ্রীপুর উপজেলার বারইপাড়ার সুবিধাভোগী কৃষক রাশিদুল ইসলাম জানান, শীতকালীন সবজি তোলা হয়েছে। সন্তোষজনক উৎপাদন হয়েছে। প্রতিমাসে তিনি তার ৫ সদস্যের পরিবারের ১৫/২০ দিনের সবজির চাহিদা এখান থেকে মেটাতে পারছেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে কিছু বিক্রি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনছেন। খামারপাড়ার ব্লকের বারইপাড়ার অন্য এক সুবিধাভোগী মো. আবুল হোসেন জানান, আমার বাড়ির আঙিনায় কৃষি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সবজি চাষ করেছি। বেশ কিছুদিন ধরে বাজার থেকে আমাকে শাকসবজি কিনতে হয় না। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের খামারপাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ সে অনুযায়ী আমরা পারিবারিক সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি ও পতিত জমিতে প্রকল্পের সহযোগিতায় উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সবজি, মসলা ও ফল উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালমা জাহান জানান, এটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ একটি প্রকল্প। অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় পতিত জমির সদব্যবহারের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যেদের সবজির অর্ধেক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারে এমন ব্যবস্থা এখানে রাখা হয়েছে। পরিবারের নারীরা কাজের ফাঁকে যাতে পরিচর্যা করতে পারেন, সেজন্য তাদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এটি উপজেলায় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সঠিক তদারকির মাধ্যমে এটি আরও কৃষকের নিকট তুলে ধরার।