শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দিয়ে ইলেকট্রনিক্সের শোরুম!


রংপুরের মিঠাপুকুরে শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। ফলে ক্ষুন্ন হচ্ছে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান। নেই কমন রুম, কম্পিউটার ল্যাব, পাঠাগার, নামাজ ঘর ও পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা। এরপরও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ করে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুটি ইলেকট্রনিক্স শো-রুম দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে এলেও রাজনৈতিক কারণে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ। এসব অনিয়মের সমাধান চেয়ে ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সরজমিনে দেখা গেছে, শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের আঞ্চলিক মহাসড়ক লাগোয়া দুটি শ্রেণিকক্ষে করা হয়েছে দুটি ইলেকট্রনিক্স শো-রুম। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ওই উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও আরেকটির মালিক ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিপন মিয়া। প্রায় বছর তিনের আগে শ্রেণীকক্ষ দুটি শো-রুমে রূপান্তরিত করেন তারা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করার সময় তারা শ্রেণিকক্ষ দুটি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে এমনটি করেছেন। এর ফলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে রয়েছে শ্রেণীকক্ষ সংকট। শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো লেখাপড়া করার মতো পরিবেশ নেই। ফলে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে নেই কমন রুম, কম্পিউটার ল্যাব, পাঠাগার, নামাজ ঘর ও পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করেছেন কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা তারা ভাবছেন না। আরেক শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, বিদ্যালয়ের লেখাপড়া মান ফিরিয়ে নিতে আসতে না পারলে শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে এ প্রতিষ্ঠান হতে। বিদ্যালয় বাঁচাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি। শিক্ষার্থী আল-আমিন বিশ্বাস ও আতিকুর রহমান বলেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ করে সেটিতে শোরুম ব্যবসা পরিচালনা করছেন সভাপতি ও সহকারী শিক্ষক। সেগুলো পুনরায় শ্রেণীকক্ষে রূপান্তর করতে জোর দাবি জানাচ্ছি। শুকুরের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে সভাপতি থাকাকালীন মাহবুবুর রহমান ও সহকারী শিক্ষক রিপন মিয়া ১০ বছরের জন্য শোরুম দুটি ভাড়া নেন। ১০ লাখ টাকা জামানতের বিনিময়ে শোরুম দুটি করতে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে তারা ৭ হাজার ভাড়া প্রদান করছেন। তিনি আরও বলেন, ১০ লাখ টাকা দিয়ে ওই শোরুম দুটি সংস্কার, সীমানা প্রচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষ সংকট নেই বলে দাবি করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ পূরণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের পেক্ষিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ :