সংখ্যালঘু-কর্মসংস্থান অন্যতম নির্ণায়ক
অনলাইন নিউজ ডেক্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটাররা যেসব বিষয় ফলাফলের অন্যতম নির্ণায়ক হিসাবে বিবেচনা করছেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-সংখ্যালঘুদের সুবিধা, চাকরির বাজার (কর্মসংস্থান) বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়। এমন মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেকরা। তাদের আরও অভিমত-সুইং স্টেটগুলোতে সংখ্যালঘুরা একটি বড় ভূমিকা রাখবে। তাদের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি অভিবাসন নীতিও এসব স্টেটগুলোতে ভূমিকা রাখছে। বেশকিছু অঙ্গরাজ্যে আগে যে দল জিতেছে সেখানে এখন অন্যদল জেতার প্রবণতাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে কোন কোন বিষয় প্রভাব ফেলতে পারে-তা জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ মঙ্গলবার রাতে কাছে নানা দিক তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, কমলা হ্যারিসের জেতার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। কারণ ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বিষয়ে সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা ‘দ্য মইন রেজিস্ট্রার’র সর্বশেষ জরিপ বলেছে, রিপাবলিকানরা এখানে সব সময় জিতত। কিন্তু বর্তমান জরিপে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ৫% এগিয়ে আছেন। সেখানে রিপাবলিকানরা ৪৩% এবং ডেমোক্র্যাটরা ৪৮% সমর্থনে আছে। কারণ মহিলারা কমলা হ্যারিসকে বেশি সাপোর্ট দিচ্ছেন।
এছাড়া পেনসিলভিনিয়াতেও কমলা হ্যারিসের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে-এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কমলা হ্যারিসের জেতাটা খুব জরুরি। নইলে সারা বিশ্বে বড় ধরনের গণ্ডগোল শুরু হয়ে যেতে পারে।
অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, আগের নির্বাচনগুলোয় যা দেখা যায় তা হলো, ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যালঘু আর ইমিগ্র্যান্টস-এই দুপক্ষেরই ভোট পেত। এবার প্রথম ভাগাভাগির বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছি। আশ্চর্যজনকভাবে ফ্লোরিডা যেখানে কিনা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কিউবিয়ান ইমিগ্র্যান্টসরা সেটেলড এবং কিউবা থেকে আরও নতুন ইমিগ্র্যান্টস আসতে চায়, তারা এখন পুরোপুরি রিপাবলিকান ক্যাম্পে চলে গেছে। এখানে দেখা যায় একটি গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এর কারণ হচ্ছে ফ্লোরিডায় রিপাবলিকান সরকার অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। সেখানে কিউবান ইমিগ্র্যান্টসদের মধ্যে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে-এর প্রভাবও পড়ে। বলা যায়, ফ্লোরিডা রিপাবলিকানদের পকেটে চলে গেছে।
আমরা যদি সংখ্যালঘুদের কথা চিন্তা করি, তাদের মধ্যে কালোরাই বেশি। এছাড়াও অন্যান্য এশিয়ানও রয়েছেন। ট্রাম্পের আগের ৪ বছরে নতুন চাকরির সংস্থান হয়েছিল। ফলে সংখ্যালঘু এশিয়ান এবং কালোরা চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। আনঅ্যামপ্লয়মেন্ট রেটও নিয়ন্ত্রণে ছিল। যদিও ট্র্যাম্পকে কালো এবং এশিয়ানরা বর্ণবাদী হিসাবে জানেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংখ্যালঘুদের ট্রাম্প অনেকখানি আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি কালোদের মন জয় করতে চেয়েছেন বিগত বছরগুলোতে।
তার আরও অভিমত-ট্রাম্পের নানা কার্যক্রম কমলা হ্যারিসের জন্য বিড়ম্বনার সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশিরা পুরোপুরি ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ছিল। ইদানীং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশিদের মধ্যে ছোট একটি অংশ তারা রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকছেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, আসলে মার্কিনিরা নিজেরাই জানে না এ নির্বাচনে কি হতে যাচ্ছে। মিডিয়াগুলো নানাভাবে নির্বাচনের বিষয়গুলো তুলে ধরছেন। অনেক রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩টি অঙ্গরাজ্যে মোটামুটি কারা জিতবে সেটি বলা যায়। সুইং স্টেটের মধ্যে ৭টি স্টেটে কে জিতবেন সেটিই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কমলা হ্যারিসের জন্য পেনসিলভেনিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য। এখানে জিততে পারলে কমলা হ্যারিসের জেতার সম্ভাবনা বেশি।
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তবে ট্রাম্প যদি জেতেন তাহলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাশিয়া সুবিধা পাবে। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস জিতলে তার উলটোটা হবে। এছাড়া ট্রাম্প জিতলে চীনের সঙ্গে শত্রুতা আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস জিতলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বর্তমান অবস্থার মতোই থাকবে।
মুন্সী ফয়েজ আহমেদের অভিমত-এই নির্বাচনে যে-ই জিতুক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না। এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়েই বেশি মনোযোগী।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।