সরকারে যাওয়ার আগেই ‘অনাস্থা’ ভয়ে নওয়াজ


রাজনীতির পাঠশালায় কেউ বন্ধু নয়। ক্ষমতার খেলায় আপন নয় কেউই। গুনে গুনে পা ফেলতে হয়। দু’কদম পরপরই নাড়ি টিপে দেখতে হয় বারবার- সব ঠিক আছে তো? মসনদের আসরে সবাই শত্রু। প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার আগে অতি প্রাচীন এই রাজ-দর্শনটিকেই পিটিয়ে-ঝালিয়ে ‘পয়মন্ত’ করে নিল ‘কুরসি কুস্তি’তে এগিয়ে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। শরিকদের ‘খোরাক’ মেটানোর পরও খচখচানি কাটেনি- এ কারণেই ‘নো-অনাস্থা’ শর্তের কঠিন শিকলে হাত-পা বেঁধে ফেলল ৫ সতীর্থের। অর্থাৎ শাহবাজ শরিফের ৫ বছরের তালুকে ছটাক পরিমাণ উচ্চবাচ্যও করতে পারবে না সঙ্গের সাঙ্গোপাঙ্গরা। ডন, জিইও, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে দুদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ধারাবাহিক বৈঠকের পর অবশেষে জোট হলো পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। নিজ নিজ শর্ত বহাল রেখে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কার্যক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্যজনক পদক্ষেপে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের সর্বোচ্চ নেতা এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসাবে তার ভাই শাহবাজ শরিফকে মনোনীত করেছেন। এতে সায় দিয়েছে পিপিপিও। তবে সরকারে যাওয়ার আগেই ‘অনাস্থা’ ভয়ে ছিলেন নওয়াজ। এজন্য রাজনীতির সমীকরণে নতুনভাবে দর কষলেন আবারও। ‘নো-অনাস্থা’ শর্তেই জোট গঠনে পিপিপির সঙ্গে এগোলেন এ পথে। এদিকে পিপির চাওয়া- দেশটির প্রেসিডেন্ট হবে দলের নেতা আসিফ আলি জারদারি। ডন। এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন পিএমএল-এনের সভাপতি শাহবাজ শরিফ। তিনি তার দলকে সমর্থন করার জন্য পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আরও বলেছেন, আশা করি, আমরা (পিএমএল-এন, পিপিপি) একসঙ্গে দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনতে পারব। এছাড়াও নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ শরিফকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করেছে পিএমএল-এন। পিএমএল-এন সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম সামা টিভি জানিয়েছে, পিপিপি প্রেসিডেন্টের পদ নেওয়ার পর পিএমএল-এনের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে না। পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদে কোনো বাধা অথবা অনাস্থা প্রস্তাব থাকবে না। পিএমএল-এন মিত্রদের নিয়ে সরকার গঠন করবে। তবে প্রধানমন্ত্রীকে তার মেয়াদ পূর্ণ করতে দেওয়া হবে। সরকারে অবস্থান মজবুত করতে এবং জোটকে শক্তিশালী করতে পিএমএল-এনের বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসাবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে নওয়াজ। আটঘাট বেঁধে সরকার গঠনে নেমেছে পিপিপি এবং পিএমএল-এন। এর আগে পিএমএল-এন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। এ দুদল ছাড়াও জোট সরকার গঠনে যোগ দিয়েছে আরও চার দল- মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লীগ, ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টিসহ (আইপিপি) বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা এবং বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি)। এদিকে বুধবার দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর আলি খান মঙ্গলবার বলেছেন, দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। পিএমএলকে পরাজয় মেনে নিয়ে ইমরান খানকে দেশ পরিচালনা করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পিটিআই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের একটি পোস্টে দলটি বলেছে, পরাজয় মেনে নেওয়াই পিএমএল-এনের সেরা বিকল্প। ইতোমধ্যে খানের দল দুই প্রদেশে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। পিটিআই মজলিস ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিনে (এমডব্লিউএম) সঙ্গে কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে সরকার গঠন করবে বলে জানিয়েছে। ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই তথ্যসচিব রওফ হাসান বলেছেন, আমরা জামায়াত-ই-ইসলামীর (জেআই) সঙ্গে খাইবার পাখতুনখোয়ায় সরকার গঠন করব। তদুপরি দলটি আলী আমিন গন্ডাপুরকে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেছে। গন্ডাপুর একজন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কেন্দ্র, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়াতে সরকার গঠনের লক্ষ্যে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করেছে পিটিআই। বুধবার খানের দল অভিযোগ করেছে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো পিএমএল-এন সভাপতি শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রাতের অন্ধকারে ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে। খানের দল স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সংসদে সর্বাধিক আসন জিতে চমক সৃষ্টি করেছে। ৯৩টি আসন জিতেছে। পিএমএল-এন ৭৫টি এবং পিপিপি ৫৪টি আসন পেয়েছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে নতুন সরকার গঠনে কিছুটা সময় লাগবে। এবারের পাকিস্তান নির্বাচনে জয় পেয়েছেন ২৭ জন নারী। এ নির্বাচনে ৮৮২ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ৩১২ জন জতীয় পরিষদ এবং ৫৭০ জন প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।