সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর বিয়ে নিয়ে রহস্য


রাজধানীর হাতিরঝিলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জি-টিভির সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর (৩২) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা— এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো মেলেনি। পুলিশ বলছে, লাশের ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে মৃত্যু রহস্য। বুধবার বিকালে হাতিরঝিল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ও এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়। তারপর আমরা হাসপাতালে গিয়ে পারুল রায় নামে এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করি। সুরতহাল প্রতিবেদনে লিখেছেন, সারাহ রাহানুমার শরীরের কোনো অংশে দাগ বা আচড়ের চিহ্ন নেই। চুল, কপাল ও মুখ স্বাভাবিক। তবে, নাক দিয়ে তরল নির্গত হচ্ছে। হাতের আঙুলের নখগুলো নীল বর্ণের দেখা যায়। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুরতহালে বলা হয়েছে, সারাহ রাহানুমার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ও উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে, এটা জানা গেছে, সারাহ অচেতন অবস্থায় হাতিরঝিল লেকের মধ্যে ভাসছিল। তার শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাত বা আচড় নেই। কোনো যৌন নিপীড়নের চিহ্নও পাওয়া যায়নি। ফলে, মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো। মাসুদর রহমান আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে, মৃত্যুর কারণ চূড়ান্তভাবে জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ঢামেক মর্গে রাহানুমা সারাহর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এরপর তার পরিবার মরদেহ নিয়ে যায়। মরদেহ নেওয়ার সময় তার বড় বোন রাবিতা সারাহ বলেন, আমরা মরদেহ নিয়ে মোহাম্মদপুর যাব, সেখানে জানাজা পড়াব। তারপর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করব। অন্যদিকে, গণমাধ্যমের খবর রাহানুমা সারাহ বিয়ে করেছেন। তবে, তার বড়বোন রাবিতা সারাহ দাবি করেছেন, বিয়ের বিষয়ে আমি ও পরিবারের কেউ কিছু জানি না। আমার বিশ্বাস, এ তথ্য মিথ্যা। পরবর্তীতে আমরা এ ব্যাপারটা জানার চেষ্টা করে দেখব। সারাহ জি-টিভির নিউজরুম এডিটর হিসেবে কাজ করতেন। অনেকের প্রশ্ন, সারাহ রাহানুমা আত্মহত্যা করলে, কেন করেছেন? বা তাকে কেউ হত্যা করলেও কেন করা হয়েছে? সারাহ কল্যাণপুরে থাকতেন বলে জানা গেছে। সারাহ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুর গ্রামের বখতিয়ার শিকদারের মেয়ে। মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফেসবুকে লেখেন, ‘জীবন্মৃত (বেঁচে থেকেও মৃতপ্রায়) হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাহানুমা সারাহর স্বামীর নাম সায়ীদ শুভ্র। গণমাধ্যমকে শুভ্র বলেন, সম্পর্কের মাধ্যমে সাত বছর আগে আমরা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করি। গতকাল সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় ফেরেনি। না ফিরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল। সায়ীদ শুভ্র বলেন, পরে আমি তাকে ফোন করে বলি, রাতে তো তুমি বাসায় আসতে। তাহলে অন্যকে দিয়ে কেন টাকা পাঠিয়ে দিয়েছ? তখন সে ‘আমি ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দেয়। পরে রাত তিনটার দিকে খবর পাই সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। সায়ীদ শুভ্র আরও বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াও হয়নি। তবে, বেশ কিছুদিন থেকে আমার স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। ভাবছিলাম আমরা দুজনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসব। দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সায়ীদ শুভ্রের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মানসিক অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করুন। আমি আপাতত এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। পরবর্তীতে আমি এ ব্যাপারে কথা বলব।