সাইবার অপরাধে বেশি ভুক্তভোগী তরুণীরা


দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয় তরুণ সমাজ। এদের মধ্যে তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে শনিবার ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ গবেষণা তুলে ধরেন বক্তারা। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে (সিক্যাফ) অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিক্যাফ উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক। প্যানেল আলোচক ছিলেন বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগে. জে. কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জিএসজি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ. হুসেইন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও প্রধান গবেষক হুসেইন সামাদ, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’র কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ। সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুন আশরাফী। সিক্যাফ সহসভাপতি এসএম ইমদাদুল হক এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল মুনয়েম সৈকত উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ। দেশে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধের নতুন মাত্রা। ব্যক্তিগত ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি এবং প্রলোভনে প্রকট সাইবার অপরাধ। তবে সামাজিক লোক-লজ্জার ট্যাবুতে তা থাকছে অন্তরালেই। তাই গণ-সাইবার স্বাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সল্যুশন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত সিক্যাফ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৪ প্রতিবেদনে দেখা গেছে দেশে সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধ। এক বছরের ব্যবধানে এ হারটা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে মোট অপরাধের ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর পর দুই বছরের জরিপফল থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী সাইবার আক্রান্ত শিশুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশের বয়সই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আক্রান্তদের প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বেদখলের (হ্যাকিং) শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে। আর বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবারজগতে পর্নোগ্রাফি অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন পর্নোগ্রাফিতে। এ ছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানি, ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়েরি এবং ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন।