সাক্কুর পাশে নেই বিএনপি আ.লীগের সঙ্গে ‘আঁতাত’


কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে এবার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পাশে নেই বিএনপি-জামায়াত। দলের মূলধারা এবং জোটের নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে অনেকটা দূরে রয়েছেন বলে কথা বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীবিহীন এ নির্বাচনে সাক্কুর একমাত্র ভরসা নিজস্ব বলয় এবং সরকার দলের অদৃশ্য একটি অংশ। কী কারণে এক সময়ের সহকর্মীরা তার কাছ থেকে এত দূরে? দলীয় কর্মী ছাড়া তিনি কি এ বৈতরণী পার হতে পারবেন? এমন আলোচনা এখন নগরীর অলিগলিতে। ফলে এবারের সমীকরণ আগের সব নির্বাচন থেকে অনেকটাই ভিন্ন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লায় বিএনপি-জামায়াত জোটের একক সমর্থন নিয়ে ২০১২ এবং ২০১৭ সালে দুবার সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নির্বাচিত হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলাসহ নির্যাতন করেছেন। দলকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিরোধী দলের নেতা হয়েও সব সময় পুলিশ প্রটেকশনে থেকেছেন। সরকার দলের নেতাদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। স্থানীয় সংসদ-সদস্যের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সরকার দলের নেতাদের সঙ্গে ঠিকাদারি কাজের ভাগবাটোয়ারা করেছেন। ২০১৭ সালে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেছেন। তা সত্ত্বেও সিটি নির্বাচনে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বাধ্য হয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই থাকতেন। ২০২২ সালের নির্বাচনে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রার্থী হলেও নৌকার বিপক্ষের নেতাকর্মীরা সাক্কুর পক্ষেই অবস্থান নেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে নিজাম উদ্দিন কায়সার ৩০ হাজার ভোট পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত মেয়র নির্বাচিত হন। রিফাতের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়ে যায়। দলীয় প্রতীকবিহীন এবারের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের একটি অংশের সঙ্গে সাক্কু আঁতাত করছেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। যার ফলে বিএনপি-জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতাদের থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাক্কুকে এড়িয়ে চলছেন। এদিকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের একচেটিয়া সমর্থন পেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। তরুণ প্রজন্মের এ প্রার্থীর সঙ্গে প্রকাশ্যেই ভোটের মাঠে কাজ করছেন হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মী। বিশেষ করে দলীয় প্রতীক না থাকায় নেতাকর্মীরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারছেন বলে অভিমত অনেকের। কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান ছুট্টি বলেন, সাক্কু নানা কৌশলে বিএনপিকে ব্যবহার করে নিজে ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়েছেন। বিএনপির আদর্শ ভুলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়ায় তাকে আমরা আর বিএনপি মনে করছি না। আমরা তাকে এখন আওয়ামী লীগের লোক মনে করি। কারণ তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে দল ও নেতাকর্মীদের কোনো কাজে আসেননি। উপরন্তু তার দ্বারা নেতাকর্মীরা হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকার থেকে একজন সুবিধাভোগী লোক। এখনো আওয়ামী লীগের একটি অংশের সঙ্গে সাক্কুর আঁতাত রয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনে বিএনপি এবং সমমনা জোটের নেতাকর্মীরাও সাক্কুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাবেক কাউন্সিলর মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, সাক্কু আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঠিকাদারি কাজের ভাগবাটোয়ারা করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কোনো নেতাকর্মী এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থি কাউন্সিলরদের কোনো সুযোগ-সুবিধা দেননি। উলটো আমাদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররাই ছিল ওনার বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ। তাই এই সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা তার পাশে থাকার প্রয়োজন মনে করে না। ১৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক কাউন্সিলর শাখাওয়াত উল্লাহ শিপন বলেন, সাক্কু ভাই এবার বিএনপির কোনো কর্মী খুঁজে পাবেন না। এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া ওনার ভুল সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। কারণ এবার সমীকরণ ভিন্ন। নিজাম উদ্দিন কায়সারের পক্ষে মাঠে নেমে গেছে বিএনপি এবং জোটের নেতাকর্মীরা। কারণ কায়সারকে দিয়েই দলের আদর্শ বাস্তবায়ন এবং নেতাকর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে বলে অভিমত সবার। তবে এ বিষয়ে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমি বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী একজন মানুষ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার আগেও কোনো আঁতাত ছিল না, এখনো নেই। এ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগেও মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি দলীয় কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানি করিনি। তিনি বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আমার সঙ্গে রয়েছেন এবং মাঠে কাজ করছেন। নগরবাসী যাকে ভোট দেবেন তিনিই কামিয়াব হবেন।