সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী: ডিএনএ রিপোর্ট হাইকোর্টে


হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে দেহাবশেষ তুলে করা ডিএনএ টেস্টের ফল তার পরিবারের সঙ্গে মিলেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে ঢাকার সাভারে কবর দেওয়া ব্যক্তিই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী।বুধবার (৪ ডিসেম্বের) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের বেঞ্চে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তারপর তার পছন্দমতো কবরস্থানে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করার অনুমতি দেন আদালত।এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ তার পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে মরদেহ তুলে ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দেন।হারিছ চৌধুরী বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত (সম্প্রতি এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে সব আসামিকে) ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে পলাতক ছিলেন দীর্ঘদিন। এরই মধ্যে ২০২১ সালে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকায় একটি মাদরাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়।হারিছ চৌধুরীর মেয়ে জানান, সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ একটা নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিডিয়া একটার পর একটা রিপোর্ট করেছে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। এটা নিয়ে যেন কখনো প্রশ্ন না ওঠে সেটা ডিটারমিন করার জন্য এ রিট করেছি। আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে, সন্তান হিসেবে এটা খুব মর্মান্তিক ও কষ্টদায়ক। এখনো মানুষ জিজ্ঞেস করে সত্যিই কি মারা গেছেন! আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এটা শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত নিরাশ করেননি।রিটকারীর আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী বলেন, হারিছ চৌধুরীর মেয়ের সঙ্গে ডিএনএ মিলেছে। অর্থাৎ, মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী। মরদেহ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাকে তার পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইছা বলেন, ডিএনএ মিলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশ দিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করার আদেশ দিয়েছেন।রিটকারীর আইনজীবীর ভাষ্য, তৎকালীন সরকারের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য হারিছ চৌধুরী আত্মগোপনে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে ঢাকা শহরেই ছিলেন তিনি। আমৃত্যু ঢাকা শহরেই ছিলেন। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপে তার মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার অদূরে সাভারের একটি মাদরাসা প্রাঙ্গণে তাকে কবর দিতে বাধ্য করা হয়। সরকার সে সময় তার প্রকৃত পরিচয় অনুযায়ী কোনো মৃত্যুসনদ দেয়নি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হারিছ চৌধুরীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি।