স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই -তারেক রহমান
অনলাইন নিউজ ডেক্স
অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আকড়ে থাকার সময়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিজিত করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিলো। ক্ষমতা হারিয়ে সেই অপশক্তি এখনো আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিজিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষের সকল শক্তিকে সজাগ এবং সর্তক থাকতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। সভায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।
তারেক রহমান বলেন, দেশেকে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করে মাফিয়া সরকারের প্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। স্বৈরাচারের ১৫ বছরের দুঃশাসনের কুফল এখনো জনগণকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের রক্তস্লাত বাংলাদেশে ৫ আগস্ট পলাতক স্বৈরাচারের পরাজয় হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে, দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহৎ ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ৩ মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে। একটি সরকারের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য তিন মাস যথেষ্ট সময় নয়, কিন্তু মনে রাখা দরকার বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রতিদিন জনগণকে হার মানতে হয়। তিন মাস সময় তাদের (জনগণ) কাছে মনে হতে পারে তিন বছরের সমান। বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাগব করতে কঠোর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অতন্ত্য জরুরী। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে ব্যর্থ হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সকল কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র মেরামত তথা প্রচলিত বিধি-বিধান সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। যা এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় বিএনপি ও সমাজের বহু মানুষ উল্লেখ করেছেন। বিএনপি সংস্কারের পক্ষে, তবে রাষ্ট্র্র কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রথাগত সংস্কারের চেয়ে জনগণের রাজনীতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন সংষ্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিকদের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। বর্তমান সংবিধানে আছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। সংবিধানে লেখা থাকার পরেও মাফিয়া সরকার মানেনি। গত ১৫ বছর জনগণের ভোট ছাড়াই, তথাকথিত জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে প্রকাশ্যে ফ্যাসিবাদের পক্ষ অবলম্বন করতে দেখা গেছে। এজন্য জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত তথা বিচার বিভাগ শক্তিশালী, স্বাধীন থাকলে ফ্যাসিবাদ কখনোই জনগণের স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। রাষ্ট্রে রাজনীতিক বন্দোবস্ত এমন হওয়া প্রয়োজন যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ, যে পর্যায়ের প্রতিনিধি হোক না কেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষতা ছাড়া কোনোভাবেই একজন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে সক্ষম হবে না। এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে নিশিরাতের আয়োজন কিংবা ডামি প্রার্থী হিসেবে জনপ্রতিনিধি হবার পথ স্বাভাবিকভাবে রুদ্ধ হয়ে যাবে।
তারেক রহমান বলেন, কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে, জনগণের বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করে ভোটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। প্রার্থীকে জনগণের আদালতে দ্বারস্ত হতে হবে। জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ কিংবা প্রশিদ্ধ করার মতো অপ্রিয় কাজের দায় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না। জনগণ নিজেরাই ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে থাকা মাফিয়া চক্রকে প্রত্যাখান করবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জন করুন। জনগণের সঙ্গে থাকুন, সঙ্গে রাখুন। প্রতিটি নেতাকর্মীর মধ্যে বিজয়ের আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো, তবে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নভেম্বর শুধু একটি দিন নয়, দিবস নয়। ৭ নভেম্বর দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলো। ২৪’র ৫ আগস্ট আরেকটি বিপ্লব ও অভ্যুত্থান ঘটেছে। পরাজিত করেছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে (শেখ হাসিনা)। ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছি। এখন ভবিষ্যতে সতর্কতার সঙ্গে পার হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার অতি অল্প সময়ে মধ্যে প্রয়োজনীর সংস্কার শেষে নির্বাচনের পরিবেশের তৈরি করবে। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে তারা সাহায্য করবে।
নির্বাচন ইস্যুতে মির্জা ফখরুল বলেন, ড. ইউনূসের সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে। তিনি অতিদ্রুত সেই সংস্কারগুলো করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিবেন এবং জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন বলে প্রত্যাশা করি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু›র সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্যে রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কামরুল আহসান, ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবকদলের এসএম জিলানী, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।