৬ মার্চ আরো বিক্ষুব্ধ হয় বাংলার মুক্তিকামী জনতা, সারা দেশে অসহযোগ অব্যাহত থাকে


৬ মার্চ ১৯৭১। এই দিনে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণে বিক্ষুব্ধ বাঙালি আরো বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। আগের কয়েক দিনের মতই অহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখে বাঙ্গালার মুক্তিকামী জনতা। ৬ মার্চ দুপুরে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘যাই ঘটুক না কেন, যত দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার ওপরে (অধীনে) রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি, ততদিন পর্যন্ত আমি পাকিস্তানের সংহতির নিশ্চয়তা বিধান করবো।’ তার ভাষণের পর পরই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানা যায়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের ভাষণের পর সারা দেশ ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। সারা দেশের বিক্ষোভ মিছিলে ‘পরিষদে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। এ দিনে সারা বাংলাদেশ রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষায় ছিল ঐতিহাসিক সেই ৭ মার্চের। যে দিন বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জনসভায় দিক নির্দেশনা দেবেন। এ দিনে টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ করা হয়। ভারতের ওপর দিয়ে পাকিস্তানের বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে বলে জানান, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম। আগের কয়েক দিনের মতই এই দিনও আনুষ্ঠানিক মিটিং-বিবৃতি চলে। হরতালও পালিত হয়। সর্বস্তরের জনতা নেমে আসে ঢাকার রাস্তায়। শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে আগে বেতন দেওয়া হয়নি, সেসব অফিস খোলা রাখা হয়। সকাল ১১টার দিকে সেন্ট্রাল জেলের গেট ভেঙে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ৭ কয়েদি নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়। এদিন রাজশাহীতে মিছিলকারীদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর গুলি ১ জন নিহত ও ১৪ জন আহত, সান্ধ্য আইন অব্যাহত থাকে। খুলনায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও গুলিবর্ষণ- ১৮ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত।