খেলাপি ঋণের ৮৬ শতাংশই ২০ শাখায়


রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের ১২ হাজার ৬০ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণের ৮৬.৪৫ শতাংশই মাত্র ২০ শাখার দায়। কারণ, এই ২০ শাখার ৯ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা এখন খেলাপি। এছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি শাখায় ব্যাংকটির ৯০ শতাংশ ঋণ পুঞ্জীভূত। সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বিশ্লেষকদের মতে, দেশের ব্যাংক খাতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়ই খেলাপি ঋণ সব চেয়ে বেশি। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে গেছে। সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এই বিপুল অঙ্কের অর্থ আর কখনোই ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, ঋণ আদায়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো খেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে-এমন নজির নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকে বিতরণ করা ঋণের অঙ্ক ছিল ৭৭ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১২ হাজার ৬০ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, খেলাপি ও অবলোপন হওয়া ঋণ থেকে প্রতিবছর আদায়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু কোনো বছরই সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। এমনকি বেশির ভাগ শাখা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় করতে পারে না। শাখাভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি খেলাপি স্থানীয় কার্যালয় শাখায়। ২০২২ সাল শেষে এই শাখার ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। এর পরেই চট্টগ্রামের লালদিঘী করপোরেট শাখার অবস্থান। কারণ, লালদিঘী শাখার খেলাপি ঋণের অঙ্ক এখন ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল করপোরেট শাখা ১ হাজার ৩০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি নিয়ে তৃর্তীয় অবস্থানে। এরপর রয়েছে যথাক্রমে রাজধানীর রমনা করপোরেট শাখা ৭০৪ কোটি ৪০ লাখ এবং খুলনা করপোরেট শাখা ৬৬৬ কোটি টাকা। এছাড়া বাকি পাঁচ শাখায়ও ব্যাপক খেলাপি ঋণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ঋণ অবলোপনেও প্রায় একই চিত্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম বলেন, এসব পুরোনো খেলাপি ঋণ। নতুন করে খুব বেশি খেলাপি হয়নি। ঋণ আদায়ে তৎপরতা বাড়িয়েছি। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ভবিষ্যতে আরও কমে আসবে। ঋণ অবলোপন থেকেও আদায়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণস্থিতি ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। ৩ মাস পর ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে সেই অঙ্ক কিছুটা কমে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে অবশ্য এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ১৭ হাজার ৩৮৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেলাপি ঋণ শুধু বেড়েই চলেছে। তবে অতিরিক্ত ছাড়ের কারণে শেষ তিন মাসের হিসাবে সেটা কিছুটা কমল। বর্তমানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকের মতো প্রায় সমপরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এক্ষেত্রে তেমন পিছিয়ে নেই। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের অঙ্ক এখন ৩ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ হচ্ছে ৪ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।