গুচ্ছের পক্ষে কথা বলায় হেনস্তার শিকার জবি শিক্ষক


গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিরোধিতা করায় শারীরিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে ৬৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ও অনুষদভিত্তিক কমিটি গঠনের জন্য এই বিশেষ সভা আয়োজন করা হয়। সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষকরা জানান, সভা চলাকালে দাঁড়িয়ে দুই হাত দিয়ে জোরে টেবিল চাপড়ান একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের। এর পর বলেন, গুচ্ছে কেন থাকবে না, তার সুনির্দিষ্ট কারণ লিখিতভাবে রেজুলেশন আকারে দেওয়া হোক। ওই সময় সভার প্রায় সব শিক্ষক হট্টগোল শুরু করেন। এর পর কিছু সিনিয়র অধ্যাপক আব্দুল কাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দেন তারা। এ সময় তাদের মাঝে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আমি ন্যায্য কথা বলেছি, তাই শিক্ষকের সামনে আমার গায়ে হাত তুলেছে। আমরা সবার সম্মতি নিয়েই গুচ্ছে এসেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা কোন কোন কারণে গুচ্ছ থেকে বের হবো- তা লিখিতভাবে সভার রেজুলেশনে যুক্ত করতে বলেছিলাম। গুচ্ছ থেকে বের হলাম- শুধু এটুকু লিখলেই তো বের হওয়া যায় না। কিন্তু আমার এ কথা তাদের সহ্য হয়নি। তিনি বলেন, আমি এ কথা বলার সময় সংসদের মতো টেবিল চাপড়ালে কয়েকজন শিক্ষক আমার দিকে তেড়ে আসেন। একপর্যায়ে তারা আমাকে শারীরিকভাবেও হেনস্তা করেন। এ বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে অধ্যাপক আব্দুল কাদের গুচ্ছের পক্ষ নিয়ে সব সিনিয়র শিক্ষকের সামনে টেবিল চাপড়াতে থাকেন। তখন কয়েকজন শিক্ষক তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এর বাইরে কিছু হয়নি। ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আমাদের সামনে এমন একটা ঘটনা ঘটবে- তা কাম্য ছিল না। শিক্ষকদের এমন ঘটনা দেখার জন্য প্রস্তত ছিলাম না। এর জন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত ও মর্মাহত। গুচ্ছ ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে ও সরকারের সিদ্ধান্তে গুচ্ছে এসেছিল। শিক্ষামন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, আগামী বছর থেকে বুয়েট, ঢাবিসহ সবার একসাথে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে। আমরা একটা সেশন অপেক্ষা করতে পারতাম। পরের বার ঢাবি ও বুয়েট না আসলে আমরা সহজেই সরে আসতে পারতাম। এ নিয়ে এত কাহিনী, মারামারি দরকার হতো না। এদিকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে উপাচার্যকে আহ্বায়ক, রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব ও কোষাধ্যক্ষসহ অনুষদভুক্ত ডিনদের সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিটভিত্তিক পরীক্ষার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে বুধবার (৩ এপ্রিল) গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষার জন্য মানববন্ধন শেষে উপাচার্যের কক্ষে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে তিন শতাধিক শিক্ষক।