নববর্ষ উদযাপনে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, প্রতিবাদী বৈশাখের প্রস্তুতি


বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখের বাকি আর মাত্র তিন দিন। এ সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে চলে বৈশাখের জমজমাট প্রস্তুতি। তবে এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ইনস্টিটিউটের গেটে ঝুলছে তালা। গত ২ ফেব্রুয়ারি হতে চারুকলা ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ইনস্টিটিউটে বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপনেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই প্রতিবাদী বৈশাখ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। বৈশাখের প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের অর্থায়নে শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের বাইরে প্রতিবাদী ম্যুরাল চিত্র আঁকছেন। আয়োজন করবেন মঙ্গল শোভাযাত্রাও। শিক্ষার্থী পায়েল দে বলেন, ‘চারুকলার শিক্ষার্থীরা সারা বছর বৈশাখের জন্য অপেক্ষা করে। এছাড়াও বৈশাখের কাজের জন্য পরীক্ষায় আলাদা নম্বরও দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর তারা আমাদের উৎসবটি পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’ আরেক শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, \'ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। প্রশাসনের কাছে আমরা বৈশাখ উদযাপনের কথা জানাতে গেলে তারা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের উপর চাপিয়ে দেয়। একে অপরকে দোষারোপ করছে তারা। আমরা কি করবো। তাই সবাই মিলে বৈশাখ উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন,‘প্রতিবাদের রঙ হিসেবে রঙিন বৈশাখের বদলে এবার আমরা সাদা-কালো চিত্রে বৈশাখ উদযাপন করবো। ইনস্টিটিউটের বাইরে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনও করবো।\' বৈশাখ উদযাপনের ব্যাপার জানতে চেয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, \'শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু ইনস্টিটিউটের অনুমতি ছাড়া আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা। আবার ইনস্টিটিউট বন্ধ আছে। এসময় বৈশাখ উদযাপন করবে কীভাবে?’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে বৈশাখের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে তাদের আসতে বলা হয়েছে।\' গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে ইনস্টিটিউটে আবাসিক হলের ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংস্কারসহ নানা অসঙ্গতির সমাধানের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। গত পাঁচ মাস ধরে তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনের মুখে গত ২ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এক মাস বন্ধের কথা থাকলেও এরপর আরও দুই দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। বন্ধ থাকা অবস্থায় ইনস্টিটিউটের ভেতরে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। তাই এবার ইনস্টিটিউটের ভেতরে নেই বৈশাখ উদযাপন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১০ সালে নগরীর সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে একীভূত করে গঠন করা হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে এর অবস্থান।