সেতু আছে সড়ক নেই


সারা দেশে এমন অনেক সেতু রয়েছে যেগুলোর সংযোগ সড়ক নেই। ফলে এসব সেতু মানুষের কোনো উপকারেই আসছে না। বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে অনেক সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে সেতুর রেলিং। শুধু সংযোগ সড়কের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ শিক্ষার্থীরা। কোথাও সেতুতে উঠতে মই, কোথাও কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করছেন তারা। আবার কেউ নৌকায়, কেউ কাদা-পানি ডিঙিয়ে নদী-খাল পার হচ্ছেন। কোনো সেতুতে ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় ভূমিহীনদের। অথচ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেতু এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, অযথাই সরকারি অর্থের এমন অপচয় করা হয়েছে। মানুষেরই যদি কাজে না লাগে তাহলে এসব সেতু নির্মাণ করা হলো কেন। গত বছরের ২৪ এপ্রিল ‘কার স্বার্থে এসব সেতু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গেল এক বছরে কিছু সেতুর সংযোগ সড়ক তৈরি করা হলেও বেশির ভাগই এখনো অকেজো। কেন এসব সড়কে সংযোগ সড়ক করা হচ্ছে না জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়েছেন। কোথাও সংযোগ সড়ক তৈরি হলেও কিছু দিনের মধ্যেই তা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কোথাও সেতু তৈরি হয়ে গেলেও এর দুপাশের ভূমি নিয়ে জটিলতা থাকায় সড়ক তৈরি করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ জানিয়েছেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নেত্রকোনার মদনে ছয় কিলোমিটার সড়কে ১১ সেতুতেই নেই সংযোগ সড়ক। এসব সেতুর মধ্যে বয়রাহলা নদীর লড়িভাঙা এলাকার সেতুটি পারাপারে স্থানীয়দের ভরসা বাঁশের সাঁকো। স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, প্রায় দুই যুগ আগে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এখনো একইভাবে পড়ে আছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় আমরা উপজেলা সদরে যেতে পারি না। হাওড়ের ধান মেশিন দিয়ে কাটা বা বিক্রি করতেও পারছি না। এ বিষয়ে মদন উপজেলা প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া পিয়াল বলেন, এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু কোনো আপডেট পাচ্ছি না। হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বামৈ ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ এখন মানুষের গলার কাঁটা। সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণের প্রায় ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও ব্রিজটি একদিনের জন্যও মানুষের কোনো কাজে আসেনি। রাঙামাটির লংগদুতে ১০ বছর আগে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতুর এখনো রাস্তার উন্নয়ন হয়নি। ফলে সেতুটি সম্পূর্ণ অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আ.জ.ম এরশাদুল মণ্ডল বলেন, সেতুটির সংযোগ সড়কের জন্য মাটি দিয়ে খাল ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পর মাটি ধসে যায়। যশোরের কেশবপুরে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে হরিহর নদের ওপর সেতু নির্মাণ করেছে এলজিইডি। কিন্তু দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারছেন না ৮ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, রাস্তা নির্মাণের জন্য শিগগিরই প্রকল্প পাঠানো হবে। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার রুলদহ-মানন্দ সড়কে এক দশক আগে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। একইভাবে জেলার সাঁথিয়া উপজেলার রাস্তায় নির্মিত সেতুর দু’পাশে মাটি না থাকায় স্থানীয়রা সেতুটি ব্যবহার করতে পারছে না। শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেহগিনি সড়কের সেতুটিতে আশ্রয় নিয়েছে ১৪টি ভূমিহীন পরিবার। পাঁচ বছরেরও বেশি তারা সেতু দখল করে সেখানে বসবাস করছে। ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কাজে আসছে না। এছাড়া পটুয়াখালীর বাউফলের মদনপুরা ইউনিয়নের দ্বিপাশা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই বছরেও নির্মাণ করা হয়নি। নাটোরের বড়াইগ্রামে সংযোগ সড়ক না থাকায় ১২ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে চান্দাই ইউনিয়নের কাটা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার উত্তরপাড়ায় সাতারখালী খালের ওপর ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেই। নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া-হিজলী রাস্তার শুরুতে বাইরভিটা খালের ওপর ৭ বছর আগে সেতু নির্মাণ করা হয়। এর এক পাশে মাটি ভরাট হলেও অন্য পাশে হয়নি। জামালপুরের মাদারগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ১০ গ্রামের মানুষ।