রাজনীতির শেষ পরীক্ষায় তুরস্কের অপরাজিত নায়ক


প্রার্থীদের ঢাকঢোল পেটানো শেষ। এবার ভোটারদের পালা। তুরস্কে আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হবে গত ২০ বছর ধরে তুরস্কের সিংহাসন দখল করে থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ভাগ্য বদলের খেলা। তুর্কিরা আবারও এরদোগানের যুগে বাস করবেন কিনা স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় ভোট শেষের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই। দেশটির রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের শেষবেলায় এসে রাজনীতির শেষ পরীক্ষায় দাঁড়িয়েছেন তুরস্কের অপরাজিত নায়ক রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান (৬৯)। দুই দশকের শাসনের অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার পলিতে তরতর করে বেড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী জোটের বিরুদ্ধে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে চলেছেন তুরস্কের এই ‘লৌহমানব’। ‘তুরস্কের গান্ধী’ স্বল্পভাষী কামাল কিলিচদারোগ্লুর (৭৪) ছয় দলীয় জোটের মুখোমুখি হবে এরদোগানের ৫ দলীয় জোট। বিরোধী শিবিরের এ দলগুলোর বেশিরভাগই এরদোগানের পুরোনো মিত্রতে ভরা। দুর্নীতিবিরোধী এক সময়কার বর্ষসেরা এ সাবেক আমলার জনপ্রিয়তাও বেশ তুঙ্গে। হয়তো পশ্চিমাপন্থি বলেই নির্বাচনের আগেই তার জয়জয়কার রবে সয়লাব হয়ে গেছে এরদোগানবিরোধী পুরো আন্তর্জাতিক অঙ্গন। পক্ষান্তরে দীর্ঘদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকায় এরদোগানকে অপছন্দের ঢেউও একেবারে কম ফেনা তুলছে না তুরস্কে। দেশটির চলমান ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভূমিকম্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে রীতিমতো ইমেজ সংকটে পড়েছেন তিনি। অর্থনৈতিক দুর্দশা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগেও তিনি সংকটে পড়েছেন কয়েকবার। তবে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছিলেন ২০২১ সালে। সে সময় তিনি মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়তে সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতির নিয়ম অমান্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর তার এই সিদ্ধান্তে লাখ লাখ মানুষ তাদের সঞ্চয় হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল গভীর ঋণের গর্তে। বিতর্ক সত্ত্বেও এরদোগান এখনো মনে করেন তিনি দেশ শাসন করবেন। ক্ষমতা ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাও করছেন তিনি। অন্যদিকে তুরস্কের বিরোধী দল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জরিপে এগিয়ে আছেন। সাংবাদিক ও লেখক ইয়াভুজ বেদার বলেন, ভোট নির্ভরযোগ্য হলেও ক্ষমতার হস্তান্তর কঠিন হবে। যদিও বিরোধীদের ছড়ানো তথ্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। কারণ তুরস্কের প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটগ্রহণকারী এজেন্টের অবিশ্বস্ততা, স্বচ্ছতা এবং পরিদর্শনের অভাব রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ সঠিক ওয়েবসাইট ছাড়াই কাজ করে। তারা সরকার বা বিরোধী দলগুলোর পক্ষে গণকারচুপির যন্ত্র হিসাবে কাজ করে। আলোচন-সমালোচন-বিতর্ক ছাপিয়ে তুরস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা হয়ে উঠেছিলেন এরদোগান। অটোম্যান ইতিহাসের সেরা শাসক সুলতান সুলেমানের নামের আদলে ‘সুলতান এরদোগান’ খ্যাতিও রয়েছে তার ঝুলিতে। এরদোগানকে ভোট দেবে না নতুন প্রজন্ম: নির্বাচনি আলোড়নে তুরস্কের অলিগলিতে এবার সবচেয়ে বেশি মুখর হয়ে উঠেছে ‘নতুন তুর্কিরা’। অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম। বাবা-দাদাদের প্রিয় নেতা এরদোগানের বিপরীতে ‘গণতন্ত্রের চাচা’ কিলিচদারোগ্লুর নামই যেন খইয়ের মতো ফুটছে তাদের মুখে। আর এটাই এবার সবচেয়ে বড় ভয় এরদোগানের। আজকের এ নির্বাচনে ভোটারদের একটা বিশাল অংশই হলো এই তরুণ ভোটার। প্রায় ৫০ লাখ নতুন প্রজন্ম প্রথমবারের মতো অংশীদার হবে নির্বাচনি এ মহোৎসবে। যারা এরদোগানকে নিয়ে কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছেন না। এরদোগান ইসলাম অধ্যুষিত তুর্কিকে একটি ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ তৈরি করার স্বপ্ন দেখেন। মতের বৈপরীত্য নবাগত ভোটারদের মধ্যে। তুর্কি তরুণরা ধর্মের শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করে আরও বেশি নাগরিক স্বাধীনতা উপভোগ করতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে একটি জরিপে দেখা যায়, ১৮-২৫ বয়সিদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ এরদোগান পার্টি একেপিকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও নতুন অনেক ভোটার রয়েছেন যারা তাদের ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে তুর্কিতে আর কেনো রাজনৈতিক দলের উত্থান দেখেননি। এমনই এক তরুণ ভোটার ক্ষোভ ঝেড়ে এরদোগানের ২০ বছরের শাসন নিয়ে মন্তব্য করেন, ‘রাজনৈতিক এ ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবতে আমি দিন দিন ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি, এরদোগান ক্ষমতা থেকে সরে গেলে তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারবেন।’ তবে আশার কথা হলো তুরস্কে এবার ভোটার ৬ কোটি ৪০ লাখ।