পাকিস্তানি গণমাধ্যমে ‘গায়েব’ ইমরান খান


পাকিস্তানের গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রধান ইমরান খানের ছবি ও খবর প্রকাশ করা হচ্ছে না। খবর বিবিসির। এমনকি মঙ্গলবার রাতে লাইভ টিভি শো চলাকালীন পাকিস্তানি উপস্থাপক কাশিফ আব্বাসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর করা লিগ্যাল পিটিশনের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। ইমরান খানের নাম উচ্চারণ করেন তিনি, এর পরপরই দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। আব্বাসি বলেন, অনুচ্ছেদ ৬ এর অধীনে তিনি (আইনজীবী) একটি আবেদন করেছেন ইমরান খানের বিরুদ্ধে…দুঃখিত, পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা টিভি উপস্থাপক আব্বাসির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই কঠোর পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে দুর্নীতির এক মামলায় মাসখানেক আগে ইমরানকে গ্রেফতারের ঘটনা, যাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইমরান খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কেউ কেউ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেন, যদিও কোথাও আবার সহিংস বিক্ষোভও হয়। ওই সময়ে লাহোরের সবচেয়ে সিনিয়র সামরিক কমান্ডারের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি সামরিক অবকাঠামো এবং কয়েকটি সেনানিবাসে আক্রমণ হয়েছিল। এসব ঘটনায় ইমরান খানের হাজারো সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসব ব্যক্তিদের সামরিক আদালতে বিচার করতে চায় দেশটির সেনাবাহিনী। কিন্তু সামরিক আদালতে বিচার হলে তা আন্তর্জাতিক আইন বিরুদ্ধ হবে বলে জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো। পাকিস্তানের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-পেমরা গত ৩১ মে দেশটির সংবাদ চ্যানেলগুলোতে একটি নির্দেশনা পাঠায়। গত ৯ মে’র সেই ঘটনা উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়, বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা ছড়ানো ব্যক্তিদের সংবাদ চ্যানেলে প্রচার থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। ওই নির্দেশনায় ইমরান খানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি; যারা বলেছেন, তাদের চ্যানেলে স্পষ্ট ভাষায় সেই বার্তাটিই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তিদের বরাতে বিবিসি লিখেছে, ইমরান খানের নামোল্লেখ করা হচ্ছে না, তার ছবি দেখানো হচ্ছে না, তার বক্তব্যও প্রচার করা হচ্ছে না। এমনকি চ্যানেলের টিকারেও তার নামোল্লেখ করার অনুমতি নেই। যদি তাকে উল্লেখ করার প্রয়োজনই হয়, তবে সেক্ষেত্রে তার পদবী ‘পিটিআই চেয়ারম্যান’ দিয়ে তাকে বোঝানো হচ্ছে। দুটি সূত্রের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তারা টিভি চ্যানেল মালিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। এসব মালিকদের পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। কর্মকর্তারা তাদের প্রত্যাশা বা নির্দেশনা স্পষ্টভাষায় টিভি চ্যানেল মালিকদের বলে দিয়েছেন। পাকিস্তান টিভিতে কাজ করা একটি সূত্র বলছে, মালিকদের বলা হয়েছে, তার (ইমরান খান) নাম রয়েছে এমন কোনো সংবাদ আপনারা প্রচার করবেন না। যদি সেটি করেন, তবে তার দায়ও আপনাদেরই। টিভি স্টেশনগুলোর যারা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তাদের কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। বিবিসি জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও তারা যোগযোগের চেষ্টা করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু তারা জানায়নি। পেমরার ডিরেক্টর জেনারেল বলেছেন, তারা টিভি চ্যানেলগুলোতে ওই নির্দেশনা পাঠিয়েছেন, তবে ইমরান খানের নাম উল্লেখ না করার কোনো নির্দেশনা তারা দেননি। পাকিস্তানে কোনো রাজনীতিককে এমন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার ঘটনা এটিই প্রথম নয়; এর আগে ইমারন খানের মেয়াদেও তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পাকিস্তানি এক সাংবাদিক বিবিসির ইসলামাবাদ সংবাদদাতা ক্যারোলিন ডেভিসকে বলেন, পাকিস্তানে সবসময়ই কোনো না কোনোভাবে সেন্সরশিপ ছিল। আমি আইএসপিআর(সেনাবাহিনীর প্রেসউইং) থেকে ফোন পেতাম। বলা হতো, ইমরান খান সম্পর্কে সমালোচনামূলক কথা বললে তার পরিণতি দেখতে হবে।