শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও হার মানেনি জাহিদুলঃ তাঁর আয়ে চলে পুরো সংসার


শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন-যুদ্ধে হার মানেনি জাহিদুল ইসলাম(২৩)। ছোট্র দোকান ঘরে চা বিক্রি করে চলে তাঁর পুরো সংসার। দুর থেকে বুঝার উপায় নেই, সে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। মনে হবে ৭ থেকে ৮ বছরের একজন শিশু। কিন্তু অন্য সবার মতো তার শারীরিক গঠন বাড়েনি। জন্ম থেকেই শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী সে। কানেও তেমন শুনতে পায় না। সকল বাঁধা পেঁরিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সে। নিতে চান পুরো পরিবারের সকল দায়িত্ব। প্রতিবন্ধী হলেও নিজের ইচ্ছা শক্তি আর মনোবলে এগিয়ে চলতে চায় সে। তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য জাহিদুল ছোট্র একটি কুড়ে ঘরে চা বিক্রি করে। তাঁর উপার্জনের টাকায় চলে পুরো পরিবার। নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের সিদ্দির গ্রামের মো. বাছেদের ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম (২৩)। পরিবারে মা-বাবা, ভাই আর স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। চার ভাইয়ের মধ্য দ্বিতীয় জাহিদুল। জাহিদুলের পরিবার জানান, ২০২০ সালে বাড়ির পাশে বাঁশের কঞ্চি আর কলাগাছের পাতার ছাউনি দিয়ে ক্ষুদ্র একটি চায়ের দোকান গড়েন। মাত্র ৫০ টাকায় মালামাল দিয়ে শুরু করে দোকান। তারপর শুরু হয় জাহিদুলের জীবন- সংগ্রাম। মাত্র আড়াই বছরের সেই দোকান এখন বড় চায়ের দোকানে পরিণিত করেছে। লাভের অংশের অল্প অল্প টাকা দিয়ে দোকানের পরিধি বাড়িয়ে। এখন তার রোজগারের টাকায় চলে পুরো সংসার। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তার দোকান। এলাকার সকল শ্রেণি মানুষ তার দোকানে চা-পান খেতে আসেন। অনেকে অবসর সময় দোকানে চলে আড্ডা। প্রথমের দিকের শুরুটা কষ্টের হলেও বর্তমানে পরিবার নিয়ে ভালই দিন কাটছে তার। সামনে বড় পরিসরে দোকান করার ইচ্ছাও রয়েছে। জাহিদুলের বাবা মো. বাছেদ বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ, তেমন কাজকর্ম করতে পারি না। ছেলেদের খরচে কোন মতে চলে সংসার। আমার ছেলে জাহিদুল জন্মগত ভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে কারো বোঁঝা হতে চায় না। সে প্রতিবন্ধী হয়েও মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়। যার কারণে দুই বছর আগে নিজ উদ্যোগে মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে দোকান শুরু করে। এখন সে দোকানে চা-পান বিক্রি করে। তার উপার্জনের টাকা দিয়ে চলে আমাদের সংসার। আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েও সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করছে।আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন। সে যেন সৎ ভাবে উপার্জন করতে পারে। মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধী। সবার মতো চলাচল ঠিক মতো করতে পারি না। ভারী কাজ করতে পারি না। আমি আমার পরিবারের বোঁঝাও হতে চাই না। নিজে সৎ পথে উপার্জন করে খেতে চাই। তাই নিজেই ২০২০ সালে ছোট্র একটি দোকান ঘর করি। তারপর পরিবার ও এলাকার মানুষের সহযোগিতায় দোকান ঘরটি বড় করি। আল্লাহপাকের রহমতে দিনে ৫০০-৬০০ টাকার চা-পান বিক্রি। আমার উপার্জনের অর্থ দিয়ে নিজে এবং পরিবারের খরচ বহন করি। দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী শরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, আমার ইউনিয়নের সিদ্দির গ্রামের বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী জাহিদুল ইসলাম। সে সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে থাকে। এছাড়াও সে অন্য কোনো সহযোগিতা নেয় না। তার নিজের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। দোকানে চা-পান বিক্রির টাকা দিয়ে সে পরিবার পরিচালনা করে। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সে পরিবারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজে কাজ করছে। এমন দৃষ্টান্ত সবাইকে অবাক করেছে। সামনে সরকারের কোন সহযোগিতা আসলে ইউনিয়ন থেকে জাহিদুলকে সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।