দেশেই আছেন বাচ্চু বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি


বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মূল হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র জানায়, বাচ্চু ঢাকা শহরে অথবা শহরের উপকণ্ঠে ঘনিষ্ঠ কারও বাসায় অবস্থান করছেন। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা ৫৯ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৪৭ আসামির বেশিরভাগই দেশে আছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন গোপনীয়তা রক্ষা করে মামলাগুলোর চার্জশিটে অনুমোদন দেওয়ায় দেশে অবস্থান করা আসামিদের কেউ পালাতে পারেননি। একটি সূত্র ইমিগ্রেশনের বরাত দিয়ে বলেছে, বাচ্চু গত ৪ মে বাংলাদেশ থেকে দুবাই যান। সেখান থেকে কানাডায় গিয়েছিলেন। কানাডা থেকে ফিরেছেন ৮ জুন। এর পর থেকে তিনি দেশেই অবস্থান করছেন। গত ১২ জুন বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার পর থেকে ঢাকার বনানী ডিওএইচএসে তাঁর বাসভবন ও বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার আড়োয়ারদিহি গ্রামের বাড়িতে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ কথা জানিয়েছে। বাচ্চুর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে গত ১৫ জুন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। পরে নিষেধাজ্ঞার কপি পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানো হয়। এর পর বিশেষ শাখা থেকে নিষেধাজ্ঞার চিঠি দেশের সব বিমান, স্থল, নৌবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৫৮টি মামলার চার্জশিট গত ১২ জুন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, বাচ্চু দেশত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি যাতে বিদেশ যেতে না পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। একাধিক সূত্র জানায়, চার্জশিটভুক্ত আসামি সবাই আত্মগোপনে আছেন। যে কোনো সময় আসামিরা দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হতে পারেন। আদালতে চার্জশিট দেওয়ায় বাচ্চুসহ আসামিরা জামিনের জন্য আদালতে হাজির হতে পারেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে ৫৬টি মামলা করার সময় ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ কয়েকজন আসামি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন। তাঁরা আর ফেরেননি। বাচ্চুর বিরুদ্ধে ৫৮ মামলার চার্জশিট দেওয়ার পর থেকে তিনি ঢাকা ও নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন না। তিনি সুবিধাজনক সময়ে স্থান পরিবর্তন করছেন। আত্মীয়স্বজন বা তৃতীয় পক্ষের কোনো ব্যক্তির সহায়তায় তিনি আত্মগোপনে আছেন। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর অবস্থান জানার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৫ জুন ঢাকায় তাঁর বনানী ডিওএইচএসের ৪ নম্বর সড়কের ২/২-এ নম্বর বাসায় গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ বাসায় থাকেন না। বর্তমানে কোথায় আছেন, কেউ তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তাঁর অবস্থান সম্পর্কে বাড়িটির আশপাশের কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মী মো. ফেরদৌস জানান, তিনি দায়িত্বে আছেন দুই থেকে আড়াই বছর ধরে। তিনি জেনেছেন, বেসিক ব্যাংকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে বাচ্চু এই বাসায় থাকতেন। নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাচ্চুকে এই বাসায় কখনও আসা-যাওয়া করতে দেখেননি। নিরাপত্তাকর্মী আরও জানান, এক বিঘা জমির ওপর সাততলা বাড়িটির জমির মালিক অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা। ব্যবসায়িক ভাগাভাগির ভিত্তিতে এই জমিতে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছেন বাচ্চু। ২০০৩ সালের দিকে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়। এ বাড়ির একটি অ্যাপার্টমেন্টে বাচ্চু বাস করতেন।