রাতেও কামড়াচ্ছে এডিস মশা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা। এতদিন মনে করা হতো শুধু দিনেই কামড়ায় এ মশা। তবে প্রাণিবিজ্ঞানী ও কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শহরে সক্রিয় উজ্জ্বল আলোর কারণে এ মশার আচরণে পরিবর্তন হয়েছে। এখন রাতেও কামড়াচ্ছে এ মশা। তাই দিনে-রাতে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। চট্টগ্রামে গেল ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মারা গেছে এক শিশু। রাজশাহী ও দিনাজপুরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের প্রায় সবাই ঢাকা ফেরত। তারা ঢাকা থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে এডিস মশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া এডিস মশা প্রজনন বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। তিনি বলেন, একটানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলে মশা এবং লার্ভাগুলো ধুয়ে যেত। তবে চট্টগ্রামে মশার প্রজাতি শনাক্ত কিংবা মশা নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে গত দুবছর ধরে কোনো জরিপ হচ্ছে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগে এডিস মশা কেবল দিনে কামড়াত। কিন্তু এখন মশার আচরণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। দিনে-রাতে কামড়াচ্ছে। অতিরিক্তি আলোর কারণে তারা দিন-রাত বুঝতে পারছে না। এজন্য সব সময় ঘুমাতে গেলে মশারি ব্যবহার করতে হবে। হাত-পা ঢেকে রাখতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
ব্যুরোর পাঠানো খবর-
চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৪৮ রোগী : নগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলাতেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শ্রাবণী সরকার নামে ১১ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে নগরীর সদরঘাট থানার পোস্ট অফিস গলিতে পরিবারের সঙ্গে থাকত। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৮ রোগী। এর মধ্যে ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে, ৪ জন আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল এবং বাকি ৩৪ জন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়রি থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬৬১ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৩৮, মহিলা ১৬৯ ও শিশু ১৫৪ জন। মোট আক্রান্তের ২০০ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। বাকিরা নগরীর।
সীতাকুণ্ডের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। এ বছর সব বয়সের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০-৬০ বছরের রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। বেশিরভাগ রোগীর ব্লাড প্রেসার এবং অনুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কম পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে ২২ জুন থেকে মশক নিধনের ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরবাসীর অভিযোগ, মশক নিধনে চসিকের পক্ষ থেকে কার্যক্রম চলমান থাকার কথা বলা হলেও কার্যত তা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী বলেন, মশক নিধনে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে চসিক। চলমান ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামে মশকনিধনের পাশাপাশি মাইকিং, লিফলেট বিতরণ এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর রোগীরা ঢাকা ফেরত : বুধবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে গত চার দিনে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১ জন। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় রামেকের ৩০নং ওয়ার্ডকে ‘ডেঙ্গু ওয়ার্ড’ করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মদ বলেন, এ পর্যন্ত যেসব ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন, তারা সবাই ঢাকায় ছিলেন। সেখান থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়ে রাজশাহী এসেছেন। অনেকে ডেঙ্গু নিয়েই ঈদ করতে বাড়িতে আসেন। তীব্র জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। কেউবা ডেঙ্গু শনাক্তের পর হাসপাতালে এসেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম থানার নূর ইসলাম। তার ভাই সোহানুর ইসলাম জানান, নূর ইসলাম ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন। ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়ি এসেছেন জ্বরে আক্রান্ত হন। ৩০ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে ডেঙ্গু যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বুধবার দুপুরে এ নিয়ে রাসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ ও মশক নিধন বিভাগের একটি বিশেষ সভা হয়েছে। সেখানে চলমান নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। রাসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুর অবনতিশীল পরিস্থিতি দেখে আমরাও কিছুটা উদ্বিগ্ন। রাজশাহীর অবস্থাও যেন ঢাকার মতো না হয়, সেজন্য আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
বরিশালেও বাড়ছে ডেঙ্গু : মঙ্গলবার ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের ৪টি মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২৮ জন রোগী। ওইদিন আরও ১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এ দিন চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি যান ১৭ রোগী। সে হিসাবে বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭ জন। বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ৪৭ ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সে অনুযায়ী আমরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে রোগীদের মশারি সরবরাহ করা হয়েছে। এসব রোগীকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঈদের ছুটিতে দিনাজপুরে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু : দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ফাঁকাই ছিল। কিন্তু ঈদের ছুটিতে এই ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯ রোগী। এদের মধ্যে ঈদের কয়েকদিন আগে ২ জন এবং ঈদের পর আরও ১৭ রোগী ভর্তি হয়। এদের সবাই ঢাকায় থাকেন। সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েই তারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছেন বলে জানান হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মুহতাত আবিদ জানান, যেহেতু ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে অসংখ্য মানুষ দিনাজপুরে এসেছেন এবং তারা বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করেছেন, তাই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-কারও জ্বর দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সবসময় মশারির মধ্যে রাখা ইত্যাদি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।