‘গণতন্ত্রের বাতিঘর’ যুক্তরাষ্ট্রেই নেই গণতন্ত্র চর্চা!


‘গণতন্ত্রের বাতিঘর’ যুক্তরাষ্ট্রেই নেই গণতন্ত্র চর্চা। দেশের বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের মতে, অর্থনীতি থেকে শুর করে যে কোনো সরকারি ব্যয়, বন্দুকনীতি, অভিবাসন এমনকি গর্ভপাত বিষয়ে মার্কিন আইন এবং নীতি জনগণের নিজস্ব ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ৪৯ শতাংশ মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের চর্চা ঠিকমতো হচ্ছে না। উলটোদিকে গণতন্ত্র চর্চা ঠিকভাবে হচ্ছে বলে মনে করেন মাত্র ১০ শতাংশ মার্কিনি। আর কিছুটা ভালোভাবে চর্চা হচ্ছে বলে মনে করেন ৪০ শতাংশ নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে কিনা অথবা গণতন্ত্রে দেশের স্বার্থ দেখা হয় কিনা সে বিষয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে চালানো এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ। স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রকাশিত এ গবেষণায় এনওআরসি’র সম্ভাব্যতা ভিত্তিক আমেরিস্পিক প্যানেল থেকে প্রাপ্ত নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে। নাগরিক প্রতিনিধি হিসাবে ১ হাজার ২২০ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর ২২-২৬ জুন জরিপ চালানো হয়। সব উত্তরদাতাদের জন্য নমুনা ত্র“টির মার্জিন রাখা হয়েছে প্লাস বা মাইনাস ৩.৯ শতাংশ পয়েন্ট। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক নাগরিক জানান, দেশের কোনো রাজনৈতিক দলেই গণতন্ত্র চর্চা নেই। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই বলে মনে করে ৪৭ শতাংশ। আর ৫৬ শতাংশ জানায় রিপাবলিকানদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা নেই। জরিপে অনুযায়ী, ৫৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, কংগ্রেস দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সঠিকভাবে বজায় রাখতে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। আর ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে করে মাত্র ১৬ শতাংশ। কানেকটিকাটের ব্রিস্টলে ৪৫ বছর বয়সি এক শ্রমিক মাইকেল ব্রাউন জানান, বরাবরই তিনি দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ। ডেমোক্র্যাট অথবা রিপাবলিকান-দুদলের কেইউ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি আমাদের হত্যা করেছে।’ তিনি এখন কংগ্রেসের প্রতি বিশেষভাবে হতাশ বলে জানিয়েছেন। কারণ দেশে জনগণের কোনো ইচ্ছার প্রতিফলন হয় না। শুধু অর্থনীতিই নয়, লিঙ্গ পরিচয় ও এলজিবিটিকিউ বিষয়গুলোতেও দেশের জনগণ যা চায় তার প্রতিফলন ঠিকমতো ঘটে না বলে জানিয়েছেন অর্ধেকের বেশি জরিপের উত্তরদাতা। যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও নীতি তৈরিতে দেশের জনগণের মতামত নেওয়া উচিত বলে মনে করে ৭১ শতাংশ জনগণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মতামত নেওয়া হয় বলে মনে করে মাত্র ৪৮ শতাংশ। জরিপে ‘আপনার মতো সাধারণ জনগণের মতামত’ সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় কিনা সে প্রশ্নে, সরকার তাদের মতামত সঠিকভাবে উপস্থাপন করছে না বলে জানান ৫৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। কিছুটা করা হয় বলে জানিয়েছেন ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ জানিয়েছে সরকার সঠিকভাবেই তাদের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে। জরিপে প্রতি ১০ জনে ৬ জন রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্র ব্যক্তি মনে করে সরকার তাদের প্রতিনিধিত্ব ঠিকভাবে করতে পারছে না। এদিক থেকে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা প্রতি ১০ জনে ৪ জন। জরিপে অংশগ্রহণকারী মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক কারালিন কিসলিং বলেন, ভোট দেওয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের আরও অনেক উপায় রয়েছে। তা হতে পারে রাজনৈতিক দলে সক্রিয় অংশগ্রহণ অথবা স্থানীয় সরকারের সভায় বক্তৃতা। কিন্তু তিনি আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন ধরনের পক্ষপাত মানুষকে এসবে অংশগ্রহণ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।