৫ স্কুলছাত্রীর ধুমপানের ভিডিও ধারণ, একজনের আত্মহত্যা, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
জেলার কুমারখালীতে সপ্তম শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সুলতানপুর গ্রাম। ঘটনার জন্য দুই শিক্ষককে দায়ী করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে রাস্তায় নেমেছেন এলাকার শতশত নারী-পুরুষ।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ নিয়ে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার হতে প্রধান শিক্ষক গণধোলায়ের শিকার হন। এর আগে সোমবার বিকেলে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে নিজ ঘরে জিনিয়া খাতুন (১৪) নামে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।
জিনিয়া খাতুন (১৪) নামে ওই শিক্ষার্থী সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। সে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াদি গ্রামের হঠাৎ পাড়ার দিনমজুর জিল্লুর শেখের মেয়ে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে জিনিয়ার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ সুলতানপুর গ্রামে পৌঁছায়। এসময় সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ জিনিয়ার মরদেহ দেখার জন্য সেখানে উপস্থিত হলে বিক্ষুব্ধ জনতা তার ওপর হামলা চালায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু, ওয়ালিউর রহমান ও বিদ্যালয়ের আয়া শিউলী আত্মগোপন করেছেন। দুপুর ২টার দিকে সুলতানপুর ঈদগাহ ময়দানে জিনিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সুলতানপুর বড় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জিনিয়ার সহপাঠী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিথি জানায়, সোমবার বিকেল ৩টার দিকে অনেকটা কৌতূহল ও শখের বশবর্তী হয়ে জিনিয়াসহ তারা পাঁচ সহপাঠী বিদ্যালয়ের চার তলার সিঁড়িঘরে ধূমপান করছিল। তাদের ধূমপান করার দৃশ্য অন্য ক্লাসের কয়েকজন শিক্ষার্থী দেখে ফেলে শিক্ষক রুমে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে বিদ্যালয়ের আয়া শিউলী সেখানে গিয়ে অফিস রুমে শিক্ষকরা তাদের ডেকেছে বলে জানান। জিনিয়াসহ পাঁচ শিক্ষার্থী শিক্ষক রুমে গেলে শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান তাদের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চরম ভাবে লাঞ্ছিত করেন।
এসময় ওই দুই শিক্ষক তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। স্কুল ব্যাগ আটকে রেখে অভিভাবকদের বিষয়টি জানানোসহ বিদ্যালয় থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। ঘটনার পর বাড়ি ফিরে লজ্জা আর অপমানে অভিমান করে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে জিনিয়া আত্মহত্যা করে।
জিনিয়ার মামা জাহিদ হাসান জানান, পাঁচ ছাত্রী স্কুলের ছাদে ধূমপান করছিল। সেখানে তার ভাগনিও ছিল। তাদের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান গোপনে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ছাত্রীদের অফিস কক্ষে ডেকে মারধর করার পর ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিসহ টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া এবং অভিভাবকদের জানানোর ভয় দেখান। এ ঘটনার পর বিদ্যালয় ছুটি হলে তার ভাগনি বাড়িতে এসে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ভুলকে পুঁজি করে ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো মোটেই কোনো শিক্ষক সুলভ আচরণ নয়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও তার ভাগনিকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় দায়ী শিক্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
তবে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান দাবি করেন, তারা ছাত্রীদের ধূমপানের কোনো দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেননি। অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ধূমপান করার বিষয়ে তাদের কাছে অভিযোগ করলে জিনিয়াসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ধূমপান করার বিষয়টি অভিভাবকদের জানানোর কথা বলা হয়। এর বেশি কিছু নয়।
ঘটনার বিষয়ে সুলতানপুর মাহতাবুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ জানান, তিনি ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের বাইরে ছিলেন। বিকেল সাড় ৫টার দিকে ঘটনাটি জেনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে কোনো শিক্ষক জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জিনিয়ার আত্মহত্যার বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম জানান, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনি নিজেই সুলতানপুর এলাকায় ছিলেন। এ ঘটনায় জিনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।