সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতই প্রধান চ্যালেঞ্জ


সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে শনাক্ত করেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর। কারণ এই তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের তথ্য। এটি সুরক্ষা দিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে অধিদপ্তর। শুধু কেন্দ্রীয় সার্ভার নয়, আঞ্চলিক সঞ্চয়পত্রের অফিসগুলোর সাইবার নিরাপত্তার বিষয়েও একই কথা বলা হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে আসছে এই তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৭০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শর্ত পূরণে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৮০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হাজার হাজার ক্রেতা সম্পৃক্ত হচ্ছে এই দপ্তরের সার্ভারের সঙ্গে। জানতে চাইলে সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের আইসিটি বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান জানান, এই দপ্তরের সাইবার এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে রক্ষিত। এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে সরকারের এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)-এর মাধ্যমে। তবে এই দপ্তরের সার্ভারে বিনিয়োগকারীদের তথ্য রয়েছে। যে কারণে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বার্ষিক কর্মসম্পদ চুক্তিপত্রে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু এর পরও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ভারতীয় একদল হ্যাকার ১৫ আগস্ট সামনে রেখে বাংলাদেশে বড় ধরনের সাইবার হামলার হুমকি দিয়েছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম বা কেন্দ্রীয় সার্ট থেকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কতা জারির পর সরকারের সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট থেকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার আগেই সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর থেকে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি তুলে ধরা হয় তাদের প্রতিবেদনে। সাইবার সিকিউরিটি হচ্ছে যেখানে কম্পিউটার, সার্ভার, মোবাইল ডিভাইস, ইলেকট্রনিক সিস্টেম, নেটওয়ার্ক এবং ডাটায় ম্যালিকুলাস আক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষা করা। এই আক্রমণের মাধ্যমে ডাটা চুরি, ক্ষতি ও অবৈধ এক্সেস থেকে রক্ষা করা। সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন সব কিছু অনলাইনভিত্তিক হয়ে পড়ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে অনেক বিনিয়োগকারী লেনদেন করছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের তথ্য এখানে আছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে টিআইএন ও রিটার্ন দাখিলপত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া হচ্ছে। ফলে এই তথ্যভাণ্ডারে সব ধরনেরই তথ্য রয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। যে কারণে অর্থ বিভাগের সঙ্গে সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) করেছে, সেখানে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে। এরই মধ্যে সঞ্চয়পত্রের বন্ডের কার্যক্রমও অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য চালু করা হয়েছে সঞ্চয়পত্র অ্যাপস। পাশাপাশি অটিস্টিকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অথবা অটিস্টিকদের সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে। এই প্রক্রিয়া কার্যকর করতে বিভাগীয় সঞ্চয়পত্র অফিস থেকে প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধিত দুস্থ ও অনাথ শিশুদের আশ্রয় প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা ও শিশু পরিবারের তহবিলের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। শিগগির চালু হবে অনাথ শিশু প্রতিষ্ঠানের তহবিল সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগের সুযোগ। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মতে, সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণিকে পরোক্ষভাবে সুবিধা দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতিমখানার তহবিল দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা হলে তাদের অর্থ সুরিক্ষত থাকবে। এটি একটি নিরাপদ বিনিয়োগও বটে। ফলে অনাথ ও এতিমদের প্রতিষ্ঠানের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনার স্কিমটি চালুর প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে সেখানে জাতীয় সঞ্চয়স্কিম অনলাইন ব্যবস্থাপনা হালনাগাদ, সীমাবদ্ধ সাংগঠনিক কাঠামো ও স্বল্প জনবলকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে শনাক্ত করা হয়। জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই অর্থবছরে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কোনো ঋণ পায়নি। উলটো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে মূল ও মুনাফাসহ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এক লাখ ২৪ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার স্থলে এক লাখ আট হাজার ৭০ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে এক লাখ দুই হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।