বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য দেয় না দেশগুলো


বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের কোনো তথ্য দেয় না সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। মালয়েশিয়া, মরিশাসসহ বিভিন্ন দেশের কাছে একাধিকবার এসব তথ্য চাওয়া হলেও আইন-কানুনের অজুহাত দেখিয়ে তথ্য প্রদানে অস্বীকার করেছে। দুর্নীতিবিরোধী মার্কিন কর্মকর্তা রিচার্ড নেফিউর কাছে এমন অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৯১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিতে পারে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দুর্নীতি মোকাবিলায় সামর্থ্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশের যোগদানের প্রাথমিক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নেফিউর সফরকালে বাংলাদেশে অর্থ পাচার নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছে। বিশেষ করে ব্লিৎজ নামের ওয়েবসাইটে অর্থ পাচারে জড়িত ১১ জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন দেওয়ার সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করা হয়। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অর্থ পাচার সংক্রান্ত খবর নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রিচার্ড নেফিউর সঙ্গে বৈঠকে ১১ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে স্যাংশন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাজ আগেও হয়েছে। তবে এর আগে কখনো প্রতিনিধি পাঠানো হয়নি। তাই রিচার্ড নেফিউর সফর কোনো দুর্নীতিবিরোধী মার্কিন কর্মকর্তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। দুই দেশের মধ্যে এক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার জন্য মার্কিন কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের এটাই উপযুক্ত সময় বলে ওয়াশিংটন মনে করে। তাছাড়া স্যাংশন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারণা বাংলাদেশে রয়েছে। এ বিষয়টির ব্যাখ্যা রিচার্ড নেফিউ করেছেন। নেফিউ পররাষ্ট্র সচিবকে জানান, দুর্নীতি দমনে স্যাংশন একটি হাতিয়ার। অপর একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মানি লন্ডারিংয়ের গতি-প্রকৃতি, দুর্নীতির ধরন, অর্থ পাচার, এসব ক্ষেত্রে আইনের ধরন কী, আইন-প্রয়োগের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়-এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে আলোচনা হয়। এছাড়া এসব বিষয়ে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন সংস্থা জড়িত এবং তারা এ আইনের প্রয়োগ কীভাবে করে, তাদের নির্দেশনা দেওয়ার তদারকি সংস্থা কারা এসব জানতে চেয়েছেন রিচার্ড নেফিউ। মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য কী করা যায় এবং এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কী সহযোগিতা করতে পারে এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তির হার কম কেন এবং এ হার বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেটাও জানতে চেয়েছেন। অপরদিকে বাংলাদেশের তরফে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হয় যে, ছোট ছোট অনেক দ্বীপরাষ্ট্রে দুর্নীতির অর্থ পাচার হয়। ওইসব রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মানি লন্ডারিংয়ের কারণে কোনো বাংলাদেশির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ এক মিলিয়ন ডলার নিয়ে গেলে তাকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়।’ ১১ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের খবরকে ‘গুঞ্জন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেছেন, ‘এটা একেবারে ভিত্তিহীন খবর। অতীতেও এমন গুঞ্জন হয়েছে। নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসবে; তখন এ রকমের গুঞ্জন আরও হবে।’ তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এটা জানান যে, চলতি বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলন হবে। সম্মেলনটিতে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। উল্লেখ্য, ‘কনফারেন্স অব স্টেটস পার্টিস অব ইউএন কনভেনশন এগেইনস্ট করাপশন’-এর দশম অধিবেশন আগামী ১১-১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অনুষ্ঠিত হবে। রিচার্ড নেফিউর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন মঙ্গলবার বলেন, ‘আমার সঙ্গে বৈঠকে দুদকের আইন-কানুন, তথ্য আদান-প্রদান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী ধরনের সহযোগিতা হতে পারে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ দুদক সচিব আরও বলেন, ‘দুর্নীতি দমনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সহযোগিতার প্রস্তাব করলে তারা চিঠি দেবে। তারপর আমরা এ বিষয়ে বিবেচনা করব। যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলন কিংবা ১১ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে স্যাংশন নিয়ে তার সঙ্গে রিচার্ড নেফিউর কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান দুদক সচিব।