সিন্ডিকেট বন্ধ করলে তারা বাজারে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করবে: বাণিজ্যমন্ত্রী


ডিমের দাম আমরা ঠিক করতে পারি না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে না। আমাদের জানার দরকার- ডিমের সঠিক দামটা কত? সেটা জানতে মন্ত্রণালয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে মাঠে নামতে পারে। তবে আমরা সিন্ডিকেট বন্ধ করে দিলাম, তারা (সিন্ডিকেট চক্র) বাজারে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিল; তখন ভোক্তারা পণ্য পেল না। এজন্য আমাদের সবদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক ছায়া সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। ‘শুধু আইন দিয়ে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়’ শীর্ষক উদ্বোধনী প্রতিযোগিতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এসএম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন দিয়ে নয়, মূল্যবোধেরও প্রয়োজন আছে। একইসঙ্গে পণ্যের সরবরাহ ও চাহিদা ঠিক রাখতে হবে। পণ্য সরবরাহ স্মুথ করা গেলে সিন্ডিকেটের প্রভাব থেকে আমরা মুক্তি পেতাম। আমরা সর্বোচ্চ শক্তিতে চেষ্টা করব যেন সিন্ডিকেটের প্রভাব না পড়ে। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের লোকবল অনেক কম। আমরা অধিদপ্তরের লোকবল বাড়াতে চেষ্টা করছি। আর ভোজ্যতেল, চিনি ও গমের মতো অনেক পণ্য ৯০ ভাগই আমদানিনির্ভর; যা মাত্র কয়েকটি কোম্পানি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। এ পণ্যগুলো নিয়ে যাতে কোনো বাজার কারসাজি না ঘটে এজন্য আমরা সর্বদা সজাগ থাকি। তবে কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়াও সমাধান নয়। তাতে সাপ্লাই ও ডিমান্ডে ব্যাহত হয়ে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তেল আমদানি করে। তেলের যে দাম ঠিক করা হয়, অনেক সময় সেই দাম মানা হয় না। আমরা চেষ্টা করছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, তাদের আইন দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। টিপু মুনশি বলেন, আজকে ২০-৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ হলে ভোক্তারা খুশি হবেন; কিন্তু আমাদের কৃষকদের কী হবে? তাদের উৎপাদন খরচ ১৮ থেকে ২২ টাকা। এ খরচের ওপর তারা কিছু লাভ করবে। তা না হলে তারা উৎপাদন করবে না। দাম বাড়লে তারা উৎপাদনে উৎসাহিত হন। কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ হলে ভোক্তারাও খুশি হবেন, পাশাপাশি কৃষকরাও খুশি হবেন। তিনি জানান, বর্তমানে প্রচলিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটি সংশোধন ও সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া গেলে ভালো হয়। সিন্ডিকেট, অবৈধ মজুদদার, কালোবাজারিদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সিন্ডিকেট সব সময় সুযোগ খোঁজে বাজারে কারসাজি করে মূল্যবৃদ্ধির জন্য, আর আমরাও সক্রিয় এসব অবৈধ কারবারিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে। ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও পেয়াঁজের মতো পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারসাজির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ৫ থেকে ৬টি করপোরেট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে যেসব বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বা করপোরেট কোম্পানিগুলো জড়িত সেগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।