অফিসার তালেবানরা এখন ‘রাজার হালে’
অনলাইন নিউজ ডেক্স
তালেবান শাসনের দুই বছরে আফগানিস্তানের অপর নাম ‘বন্দিশালা’। কট্টর নীতিগুলো ছাড়িয়ে গেছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। কঠোর শাসনের শেকলে বন্ধ হয়ে গেছে নাগরিকদের স্বাধীনতার দুয়ার। অথচ বাধাধরা নিয়মের হর্তাকর্তা ‘অফিসার তালেবান’রা ঠিকই চলছে ‘রাজার হালে’। শ্রেণিবৈষম্যের বক্ররেখার দেখা মিলছে এখন ‘নীতিবান’ তালেবানদের মাঝেও। উচ্চপদস্থ তালেবানরা যেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, সেখানে নিম্নপদস্থ তালেবানদের গল্পটা পুরোটাই উলটো। অফিসার তালেবানরা নামিদামি গাড়ি-বাড়ি, একাধিক স্ত্রীসহ নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অন্যদিকে পদমর্যাদায় নিম্নপদস্থ তালেবানরা ব্যাপক চাপ, কঠোর পরিশ্রম ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীদের বাড়ি-গাড়ি দখল করে উচ্চপদস্থ তালেবানরা শৌখিন জীবনযাপন করছে। এমনকি তারা ভ্রমণসহ বিভিন্ন পার্টিরও আয়োজন করে পরিবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করছে। আফগানিস্তানের তালেবান রাজত্বে এমন উদাহরণ এখন ‘হাটে-মাঠে’।
সম্প্রতি এক উচ্চপদস্থ তালেবান অফিসার- হাজি আঘা এবং তার দেহরক্ষীকে কাবুল প্রদেশের কারঘার এক বড় রেস্তোরাঁয় দেখা গেছে। অথচ ২০১২ সালে এই রেস্তোরাঁতেই বিদেশিদের আনাগোনা-খাওয়া নিয়ে তুলকালাম শুরু করেছিল তালেবানরা। একপর্যায়ে সেখানে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করে তালেবান। হামলা পরবর্তী বিবৃতিতে দলের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, বিদেশিদের খাওয়ার এমন সব বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলোতেই হামলা চালাবে তালেবান। ক্ষমতায় বসার পর আবার তারাই যাচ্ছেন সেসব হোটেলে। ‘নিষিদ্ধ’ সেই রস্তোরাঁয় প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন তালেবানরাই।
কারঘারের স্বাদ-সৌন্দর্য-বিলাসিতায় মুগ্ধ হাজি আঘা ‘ফুড রিভিউ’তে বলেন, ‘আসলেই মনোহর একটি জায়গা। দৃষ্টিন্দন দৃশ্য আর সুগন্ধি খাবারের সমাহার।’
পদ অনুযায়ী তালেবানদের বেতন নির্ধারিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তালেবান অফিসাররা বেশ উচ্চ বেতনই পান। একজন সাধারণ তালেবান মাসে ৩০০ ডলার বা ২৫ হাজার আফগানি মুদ্রা পেয়ে থাকেন। প্রজাতন্ত্র, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর প্রধানরা ৫০০-১২০০ ডলার পেয়ে থাকেন।
বিভাগীয় প্রধানের বেতন ৪০০-৯০০ ডলারের মধ্যে। সাধারণ তালেবান সেনাদের বেতন ১৮০ ডলার। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ২ দিনের ছুটিসহ ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। উচ্চপদস্থ তালেবানদের বেলায় অনেকটাই শিথিল। এরমধ্যে তালেবান অফিসারদের বহু বিবাহ নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়েও নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনে তালেবানরা জানান, বহু বছর যুদ্ধ ও বঞ্চনার পর তাদের ইতিবাচক পরিবর্তন ও সুখের প্রয়োজন। মৌলভী আহমদ ইখলাস বলেন, ‘শরিয়া আমাদের একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছে।’ তালেবান অফিসার ক্কারি রহমতুল্লাহ গুলজাদ বলেছেন, তিনি একটি পরিবার গড়তে চান। আমার স্ত্রী বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তান ধারণ করতে পারেননি। তাই আমি আবার বিয়ে করেছি। আমি এখন একটি সন্তান আশা করছি। তবে প্রত্যেক তালেবানরাই যে তিন-চার বিয়ে করে এমনটা নয়। মাঝারি বা নিম্নপদস্থ তালেবানরা দুই-তিন বিয়ে করেন। উচ্চপদস্থ তালেবান যারা মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী তারা অধিকাংশই ২-৩ বিয়ে করেননি।
পালটে যাওয়া সময়ের সঙ্গে তালেবানদের বাসস্থানেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। পূর্বে তারা একটি জীর্ণশীর্ণ পরিবেশে ধুধু মরুভূমি বা পাহাড়ি গুহায় কনটেইনারে বাস করতেন। এখনও কনটেইনারেই বাস করেন। তবে সেগুলো উন্নত এবং আধুনিক। পরিবর্তন এসছে পোশাক পরিচ্ছদেও। আগে তারা ‘কাবুলি’ নামে এক ধরনের পোশাক পরিধান করতেন। মাথায় থাকত পাগড়ি ও পায়ে স্যান্ডেল। বর্তমানে তারা সেনা-পুলিশ অফিসারদের মতো ব্যাজসহ পোশাক ও বুট পরিধান করেন। ১৫ আগস্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালেবানদের অফিস জীবন এবং সভ্য সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিল। মতাদর্শের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সাবেক সরকারি কর্মীদের ধরে রেখে প্রযুক্তিগত দিকগুলোর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়। নিজেদের সঙ্গে থাকা অন্যান্য তালেবানদের প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেয়। এতকিছুর মধ্যেও তালেবান নেতা আখুন্দজাদাকে এখনও জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ধারণা করা হয়, তিনি কান্দাহার প্রদেশে থাকেন এবং লিখিত পাঠে কিছু কিছু তালেবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবার এমন জল্পনা-কল্পনা রয়েছে যে, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার শুধু নামটাই বেঁচে আছে। তিনি আর বেঁচে নেই। তার বাসভবনের চারপাশে সার্বক্ষণিক কড়া নিরপত্তা পাহারাও আছে বলে শোনা যায়।
আহমদ শাহ ইরফানিয়ার : কাবুলের বাসিন্দা। আফগানিস্তানের বৃহত্তম সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।