পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের জোরালো ভূমিকা কাম্য


দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। অতীতে নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে নিয়োগ, কেনাকাটা, নির্মাণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উপাচার্যের অপকর্মে জড়ানোর অভিযোগ আসত বেশি। সম্প্রতি কোনো কোনো উপাচার্য তাদের নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দিতে গিয়ে কিংবা বেনামে থাকা নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে কেনাকাটা করতে গিয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। উদ্বেগজনক হলো, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাথাব্যথা কম। দুর্নীতিগ্রস্ত উপাচার্যদের কারণে বাকিরা ভীষণ বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। জানা যায়, ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের সময় ইউজিসির কোনো কোনো কর্মকর্তার নীরব ভূমিকা দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করেছে। এ কারণেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নিয়োগসংক্রান্ত অভিযোগ উঠলে তা তদন্তে ইউজিসির অনীহা প্রকাশ পায়। এছাড়া ইউজিসির কেউ কেউ বিভিন্নভাবে দুর্নীতিবাজ উপাচার্যদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। ফলে তদন্তের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের উপেক্ষা নীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। কাজেই শর্ষের ভূত তাড়াতে হবে আগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইউজিসির কিছু কর্মকর্তার অতি তৎপরতাও লক্ষণীয়। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতিসহ বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে। একই প্রতিষ্ঠানের কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উপেক্ষা নীতি অবলম্বন করা হলেও অন্য কর্মকর্তার অভিযোগ তদন্তে ভিন্ন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের এই দ্বিমুখী নীতি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ ধরনের দৃষ্টান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিউরে ওঠার মতো। একসময় আমাদের দেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সুনাম কমে যাচ্ছে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা কি এর দায় এড়াতে পারেন? কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা আশা করব, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করবেন। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।