ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও শুল্ক চূড়ান্ত হচ্ছে


নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি শিগগিরই চূড়ান্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করতে হবে। এজন্য দিল্লির সম্মতির প্রয়োজন। তাই ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল) চুক্তি করতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টিও অমীমাংসিত আছে। সেটিও নিষ্পত্তির দরকার। শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে নেপাল। ফলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও অমীমাংসিত শুল্ক হার এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল রোববার বৈঠকে বসছে এ সংক্রান্ত ‘মন্ত্রিসভা কমিটি’। এর প্রধান হচ্ছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এদিকে সম্প্রতি ‘অনলাইন কাঠমুান্ড পোস্ট’ বলেছে, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিলম্ব হচ্ছে। কারণ দেশটি ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে শুল্ক নির্ধারণ প্রসঙ্গটি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের সঞ্চালনবিষয়ক অবকাঠামোর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করতে চায় নেপাল। জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য উভয় দেশের সঙ্গে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। আমরা এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে আগামী রোববার বৈঠক ডাকা হয়েছে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন, তাতে জড়িত ভারত। এটি কবে হবে জানতে চাইলে মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে চুক্তি হবে। ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদানের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর নাম হচ্ছে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে জয়েন্টভেঞ্চার প্রকল্প, উৎপাদন খাতে আঞ্চলিক বিনিয়োগ, প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে গৃহীতব্য কার্যক্রম যথাদ্রুত বাস্তবায়নে পরামর্শ প্রদানের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটি।’ এ কমিটি বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশি এবং বিদেশি যে কোনো বিদ্যুৎ সংস্থা বা কোম্পানির মধ্যে যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যও পরামর্শ প্রদান করবে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে আঞ্চলিক পর্যায়ে যৌথ বা ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগের জন্য নেওয়া কার্যক্রম প্রসঙ্গেও পরামর্শ দেবে। কমিটির এক সদস্য বৈঠক প্রসঙ্গে জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করা হয়। সে শুল্কের অঙ্ক নির্ধারণ করা হবে। শুল্কসহ সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেলে তখন নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হবে। আর সে চুক্তির কার্যক্রম এগিয়ে নিতেও দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে বৈঠকে। বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। সে অনুযায়ী নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রি করা হবে। চূক্তির মেয়াদ ৫ বছরের জন্য। তবে নেপালের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হলে সেটি হবে অপেক্ষাকৃত সস্তা। তার মূল্য কম হবে। কারণ নেপালের বিদ্যুৎ হচ্ছে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের। বর্তমান ভারত থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করছে সাড়ে ৭ টাকা থেকে ৮ টাকা ইউনিট মূল্যে। আর বাংলাদেশে কয়লা থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিটের মূল্য ১৬ টাকা। এদিকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে আগ্রহ দেখিয়েছে। গত জুন মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ভারত সফর করেন। ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নেপালের সঙ্গে। ওই চুক্তি অনুসারে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসবে ভারতের সঞ্চালন লাইন দিয়ে। এটি ভারতের বহরামপুর সঞ্চালন লাইন দিয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নেপালের ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ও ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে গত মে মাসে বিদ্যুতের মূল্য ও ট্রান্সমিশন ফি নিয়ে এ বিষয়ে সমঝোতাও হয়েছে। ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হবে ভারত কর্তৃপক্ষকে। ভারতের বিদ্যুৎবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ চার্জ নিচ্ছে তার সমপরিমাণ হবে ট্রান্সমিশন চার্জ। এটা ধার্য করা হবে ভারতের উন্মুক্ত নিয়ম অনুযায়ী। কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসায় ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি দিতে হবে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসিকে (ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়া কোম্পানি)। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, ইউনিটপ্রতি ট্রান্সমিশন চার্জ ৪০-৪৫ পয়সা (ভারতীয় রুপি) হতে পারে। এছাড়া ৪ থেকে ৭ পয়সা পরিষেবা চার্জ যুক্ত হতে পারে।