প্রশ্নের মুখে বিদেশ ভ্রমণ ও ৬ খাতে ব্যয় প্রস্তাব


প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পানি সরবরাহ প্রকল্পের ৬ ধরনের ব্যয় প্রস্তাব। এক্ষেত্রে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণসহ নানা খাতের ব্যয় যৌক্তিক হয়নি বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে। ওই সভায় এসব ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। এ ধরনের ব্যয়ের প্রস্তাব করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, সরকার যেখানে চাচ্ছে একান্ত প্রযোজন ছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা ভ্রমণ বন্ধ করতে; সেখানে এ ধরনের প্রকল্পে এসব ব্যয় প্রস্তাব ঠিক নয়। পিইসি সভায় অনেকে যুক্তি দেখান এখন খরচ ধরে রাখলে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে বিদেশ সফরে যাওয়া যাবে। কিন্তু এই যুক্তিও ঠিক নয়। কারণ তখন প্রয়োজন হলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বিদেশ সফর যোগ করতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব বন্ধ করা উচিত। পরিকল্পনা কমিশনকে আরও কঠোরভাবে ব্যয় প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখা দরকার। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ইন্টার গভর্নমেন্টাল এগ্রিমেন্টের (আইজিএ) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরও আছে ইন্টার গভর্নমেন্টাল ক্রেডিট এগ্রিমেন্ট (আইজিসিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশান ফেডারেশন সরকারের পক্ষে জেএসসি এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের মধ্যে স্বাক্ষরিত জেনারেল কন্ট্রাক্ট। ইন্টার গভর্নমেন্টাল এগ্রিমেন্টালের (আইজিএ) আর্টিকেল-৭ এর আইটেম-৭ এবং জেনারেল কন্ট্রাক্টের ক্লাস ৭.১.১১ অনুযায়ী প্রকল্পের ওয়াটার সাপ্লাই ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের কারিগরি চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে কাস্টমার হিসাবে বাংলাদেশের অর্থায়নে ও তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের (ঢাকা ওয়াসা) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় ঢাকা ওয়াসার ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে বিদেশে প্রশিক্ষণ খাতে ৫০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ খাতে পৃথকভাবে চাওয়া হয়েছে আরও ৫০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ খাতে পাঁচ লাখ টাকাও চাওয়া হয়েছে। তবে এসব প্রস্তাবের যৌক্তিকতাসহ প্রশিক্ষণের ধরন, সংখ্যা, বিষয়, প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। এমন ধরনের প্রকল্পে সেমিনার এবং কনফারেন্স খাতে ১০ লাখ টাকা, বইপত্র ও সাময়িকী খাতে পাঁচ লাখ টাকা, ফের ভ্রমণ ব্যয় খাতে ১০ লাখ টাকা, অপ্রত্যাশিত বা অন্যান্য ব্যয় খাতে পাঁচ লাখ টাকা প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়েও পিইসি সভায় প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ, সরকারি মৌজা রেট পুনর্বাসন ইত্যাদি ব্যয় নির্ধারণের ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চাইবে পিইসি। পূর্ত কাজে ল্যান্ড স্কেপিং অ্যান্ড বিউটিফিকেশন খাতে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ব্যয় নির্ধারণের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলবে কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন থেকে আরও বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করা প্রকল্পের উদ্দেশ্য। বর্তমানে যে সব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান বা সমাপ্ত হয়েছে সেখানে পানি সরবরাহের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পে হায়ারিং চার্জ থাকা সত্ত্বেও গ্যাস, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্টের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে সভায় প্রশ্ন করা হবে। প্রকল্পটির কার্যক্রম ঢাকা ওয়াসা ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ প্রকল্প এলাকা রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী। সেক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা সরকারের অন্যান্য প্রকৌশল দপ্তরকে এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত না করে ঢাকা ওয়াসাকে অন্তর্ভুক্ত করার যৌক্তিকতার বিষয়েও জানতে চাইবে পিইসি।