ভর্তি জটিলতায় পিছিয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দেশে গুচ্ছভুক্ত ২২ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে জুন মাসে। কয়েকধাপে এই ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলেও এখনো দুই হাজারের বেশি আসন ফাঁকা রয়েছে। অবশেষে ভর্তি পরীক্ষার প্রায় ৪ মাস পর আসন ফাঁকা রেখেই ক্লাস শুরু করেছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী একটি সেমিস্টার শেষ করে ফেলেছে। ভর্তি প্রক্রিয়ার ধীরগতি, সিদ্ধান্তহীনতা ও বারবার মাইগ্রেশনসহ নানা জটিলতায় এভাবে পিছিয়ে পড়ছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাগবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চালু হয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে যুক্ত হয় আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়।
শুরু থেকে গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও তৃতীয় বারের মতো ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সম্পন্ন হয়েছে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। এর আগে অনুষ্ঠিত দুটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়ও ক্লাস শুরুতে দীর্ঘসূত্রিতা ছিল। বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পায়নি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ১০-১৫ বার পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা শেষের ৪ মাস ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫ মাস পর ক্লাস শুরু হয়েছিল। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার পরও এই ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০ আসন খালি ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। শিক্ষকরা এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকাকে দায়ী করেছেন।
গুচ্ছভুক্ত ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় ফাঁকা থাকা আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে আগামীকাল সোমবারের মধ্যে ‘গুচ্ছ ভর্তিসংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটি’ বৈঠক করবে। এখন পর্যন্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজার ১০০ আসন ফাঁকা রয়েছে।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, গুচ্ছ পদ্ধতি ভর্তি প্রক্রিয়ার নানা জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তিত। অনেকে দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়। এর আগে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতির শিক্ষার্থী ভর্তির দাবি জানিয়েছিল জবি, ইবি ও কুবিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।
নিজস্ব পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে একাডেমি কাউন্সিলে সিদ্ধান্তও নিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকদের দাবি ছিল, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করে খাটো করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।
কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদের নির্দেশক্রমে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উল্লিখিত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ই অংশগ্রহণ করেছে।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা, অর্থ ও সময় নষ্ট না করা, অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে ছোটাছুটির কষ্ট লাঘবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা চালু হয়। পরে আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, গুচ্ছ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়। তাছাড়া অনেকে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। যার ফলে প্রতিবছর গুচ্ছে প্রচুর আসন ফাঁকা থাকে। সোমবারের মধ্যে টেকনিক্যাল কমিটি ফাঁকা আসন কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যায়, সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। এরপর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পন্ন করা হবে।
এ পরিস্থিতিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নিয়ে জানতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি ফোন রিসিভ করে বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি বলে ফোন কেটে দেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নেতৃত্বে রয়েছেন।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।