জিএসপি প্লাস পেতে শ্রম আইন সংশোধনের তাগিদ


ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি প্লাস (শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার) সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ যদি শ্রম আইন সংশোধনে ব্যর্থ হয়, তবে জিএসপি প্লাস বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। বুধবার রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। ইইউ-ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে। ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তারের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। হোয়াইটলি বলেন, বাণিজ্য বাংলাদেশ-ইইউ’র বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু। এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটবে, যা ইবিএ’র (অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার) অধীনে বাংলাদেশ উপভোগ করত। পরবর্তী সুবিধা জিএসপি প্লাস পেতে হলে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। কারণ শ্রম আইন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং কমিশনের জন্য এই বাণিজ্য ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশের আবেদন বিবেচনা করার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে, যা জিএসপি প্লাস পাওয়ার প্রধান চালক হবে। আমরা শ্রম আইন সংশোধনের বিষয় নিবিড়ভাবে মনিটরিং করছি। আশা করছি, একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানদণ্ড মেনে ত্রিপক্ষীয় অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইনটি বাস্তবায়ন করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকিংসহ অন্য সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করছি। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার কমতি নেই। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে কেউ ঠকবে না। লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডায় পৃথক সেল রয়েছে। এ সেল বিনিয়োগ নিবন্ধন থেকে শুরু করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সনদ সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা দিয়ে আসছে। ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ২০২৯ পর্যন্ত অব্যাহত রাখা জরুরি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের পাশাপাশি পাদুকা, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য আমদানির জন্য ইইউ’র প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেমিনারে ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগে ইউরোপীয় কোম্পানি চ্যালেঞ্জ’ ও ‘জিএসপি প্লাসের পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা অংশ নেয়। প্যানেল আলোচনায় এয়ারবাসের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ মোরাদ বৌরোফেলা বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের ভুল ধারণা আছে। এটি দূর করতে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে নজর দিতে হবে। লাফার্জ হোলসিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর ভ্যাট ও আয়কর নীতি পরিবর্তন হয়, যা বিনিয়োগকারীদের সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনায় প্রধান বাধা। এছাড়া বিদ্যুৎ-জ্বালানির অপ্রতুলতাও রয়েছে। পেট্রোম্যাক্স এলপিজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসিহ নিয়াজি বলেন, বাংলাদেশ প্রমাণ করতে পেরেছে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এটি নিরাপদ ও আকর্ষণীয় স্থান। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে।