পরোয়ানার পর বদিউল আলমের শ্যালক গ্রেফতার


পাঁচ বছর আগে ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। সেই মামলায় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বদিউল আলম ওই মামলার বাদী। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্যান্য দুর্বৃত্তের সঙ্গে ইশতিয়াক মাহমুদও জড়িত ছিলেন। তিনি চার্জশিটভুক্ত এক নম্বর আসামি। মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো. মাহফুজুল হক ভূঁইয়া বলেন, ইশতিয়াককে বুধবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের খিলজি রোডের অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। আগামীকাল তাকে আদালতে পাঠানো হবে। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবী চার্জশিট গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। এদিকে মুজাহিদ আজমীর তানহা মারা যাওয়ায় তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন আদালত। ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকজন অংশ নেন। কিন্তু ওই রাতে নৈশভোজের নামে সেখানে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই বাড়িতে হামলা করা হয়। এ সময় বার্নিকাটের গাড়িবহরেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও আসামিরা ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ড. বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদসহ নয়জনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রাজন সাহা। সম্পূরক চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যদিকে মামলার ১ নম্বর আসামি তার শ্যালক মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ। ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বদিউল আলম ও নিচতলায় ইশতিয়াক মাহমুদ বসবাস করেন। দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলমান। ঘটনার দিন রাতে বাদীর বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করেন বদিউল আলম। নৈশভোজে বার্নিকাট ছাড়াও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, হাফিজ উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা অংশ নেন। চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, নৈশভোজকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন বাদীর বাসায় বার্নিকাট, ড. কামাল হোসেন, হাজিফ উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা অংশ নেন। কিন্তু সেখানে নৈশভোজের নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর পর আসামি মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ (৬২), ফিরোজ মাহমুদ (৪৮), নাইমুল হাসান রাসেল (২৭), মীর আমজাদ হোসেন আকাশ (২৮), মো. সাজু ইসলাম সাজু (৩২), রাজিবুল ইসলাম রাজু (২৯), মুহাম্মদ শহীদুল আলম খান কাজল (৪০), সিয়াম (২৫), অলি আহম্মেদ জনি (২৩), মোহাম্মদ মুজাহিদ আজমীসহ (তান্না) অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জন বাদীর বাড়িতে হামলা করেন। ঘটনার একপর্যায়ে রাত ১১টার দিকে বার্নিকাটের গাড়িবহর ধাওয়া করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। কিন্তু বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে আসামিরা বাদীর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন এবং বাদী, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহাবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেন। পরে বাদীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আসামিরা। সম্পূরক চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ, নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, সাজু ইসলাম, রাজীবুল ইসলাম, শহিদুল আলম খান, সিয়াম ও অলি আহমেদ। ইশতিয়াক মাহমুদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। অন্য আসামিরা জামিনে। এ ছাড়া মুজাহিদ আজমীর তানহা মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। জবানবন্দিতে ইশতিয়াকের নাম আসায় অধিকতর তদন্তে আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সর্বশেষ একই বছরের ৪ ডিসেম্বর মামলায় ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরে দেখা যায়, তাদের মধ্যে সাক্ষী ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার জবানবন্দিতে ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেন। এর পর ২৭ ডিসেম্বর আদালত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় থেকে উত্তোলন করে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঢাকার সিএমএম আদালতে পাঠান।