নোয়াখালীতে ১৭৯ প্রতিমা বিসর্জন


শারদীয় দুর্গাপূজার পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন বিজয়া দশমীতে নোয়াখালীতে ১৭৯টি প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো তাদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব। ২০২১ সালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় এবার পূজা উদ্যাপনে শঙ্কার মধ্যে ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। জেলায় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই জন্য এবারের শারদীয় দূর্গা পূজায় হিন্দু সম্পদ্রায়ের লোকজনের পাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। নোয়াখালী জেলায় এবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় ১৭৯টি পূজা মন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। এছাড়া ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হয় ৬টি। এই পূজায় সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পূজার শুরু থেকে গতকাল মঙ্গলবার শেষ দিন পর্যন্ত জেলার সদর ও সুবর্ণচর উপজেলায় পূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন, মন্ডপ পাহারা, মন্ডপে আর্থিক অনুদান ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন। জেলার চাটখিল ও সোনাইমুড়ী উপজেলায় পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করে আর্থিক অনুদান ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে নৌকায় ভোট চান। এছাড়া চাটখিল-সোনাইমুড়ী উপজেলায় পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করে আর্থিক সহযোগিতা করেন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মোহাম্মদ ফারুক। দুপুরে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আনন্দময় মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে পূজারীরা বলেন, আমরা ২০২১ সালের ঘটনায় এবারের পূজা উদযপিনের পূর্বে অনেকটা শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদেরকে সাহস যুগিয়ে আমাদের মন্ডপ পাহারা দিয়ে শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপনে সহযোগিতা করেছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা শেষ করতে আমাদেরকে সহযোগিতা করায় সরকার, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আনন্দময় পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি নারায়ণ দেব নাথ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুখি-সমৃদ্ধ এবং অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এবার প্রশাসনের প্রত্যেক স্তরে কঠোর নিরাপত্তা এবং জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে আমাদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ঊনার নির্দেশনায় আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা শেষ করতে পেরেছি। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, অতীতের বদনাম গোছাতে এবার জেলার প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃৃঙ্খলা বাজিহনীর সদস্যদের সঙ্গে তারা মন্ডপগুলো পাহারা দিয়েছে। এতে জেলায় কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। আমরা আশা করছি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের এই সম্প্রীতি বজায় থাকবে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবর রহমান বলেন, জেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল প্রশাসনের সদস্যরা আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। এতে খুব সুন্দরভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শারদীয় উৎসব শেষ হয়েছে। ২০২১ সালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মন্দির ও পূজা মন্ডপে হামলা, লুটপাট এবং ২ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। সেই শঙ্কার মধ্যদিয়ে এবার পূজা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ উৎসব করতে পেরে খুশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এবারের মতো এমন সম্প্রীতি বজায় থাকবে আগামীর বাংলাদেশে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।