এশিয়ান হাইওয়ের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ


চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর বঙ্গবন্ধু টানেল নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে। এ সম্ভাবনার নাম চীনের সিল্ক রোড। সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেলটি প্রথমে চট্টগ্রামকে যুক্ত করবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। আর এশিয়ান হাইওয়ে যুক্ত হবে চীনের সিল্ক রোডে, যে সড়কপথ ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীন হয়ে মিলবে ইউরোপে। এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগকে সহজ করতে চায় চীন। এ জন্য বাংলাদেশের আটটি মহাসড়কের ৬০০ কিলোমিটার এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের। সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক) এশিয়ান হাইওয়ে এবং বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের (বিসিআইএম) মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর তৈরির নতুন এ প্রস্তাবনা এরই মধ্যে প্রকল্প আকারে গঠনের পর সমীক্ষা চালিয়ে নকশা চূড়ান্ত করেছে সড়ক বিভাগ। কিন্তু মহেশখালীতে চীনের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রচেষ্টা হোঁচট খাওয়ায় উদ্যোগটিতে ছিল না কাঙ্ক্ষিত গতি। তবে বঙ্গবন্ধু টানেলে যান চলাচল শুরুর পর এশিয়ান হাইওয়ের পথে বাংলাদেশের পা রাখার সম্ভাবনা আবারও উজ্জ্বল হয়েছে। জানতে চাইলে একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের (বিসিআইএম) মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন গতি আসবে। বাংলাদেশ এ করিডোরে ঢোকার সুযোগ পেলে লাভবান হবে বেশি। টানেল ও মেরিন ড্রাইভ এ সম্ভাবনাকে আবার সামনে এনেছে।’ এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘টানেলসহ মেরিন ড্রাইভ তৈরির উদ্যোগ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। বঙ্গবন্ধু টানেলকে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগে ব্যবহার করা গেলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। তৈরি হবে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৬০০ কিলোমিটার মহাসড়ক যুক্ত করতেই কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পাশেই সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে আউটার রিং রোড নামে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নতুন আরেকটি বাইপাস সড়ক। টানেলের পাশে থাকা রিং রোড আরও বিস্তৃত হবে। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত ১৬৮ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ তৈরি করা হবে। ৪২ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য খরচ ধরে কাজও শুরু করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এ ছাড়া এশিয়ান হাইওয়েকে সামনে রেখে ১৮ হাজার কোটি টাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। কর্ণফুলীর কালুরঘাটে নির্মাণ হবে আরেকটি সড়ক কাম রেল সেতু। ৩ হাজার কোটি টাকায় হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ৪৫৩ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে মুরাদপুর-লালখানবাজার ফ্লাইওভার। এসব প্রকল্পের কয়েকটি চালু হয়েছে, কিছু এ বছরই আলোর মুখ দেখবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে হওয়া টানেল ঘিরে পর্যটন, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সুযোগ বেড়েছে। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি বদলে যাবে বলে মনে করেন চিটাগং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ। তিনি বলেন, ‘পাঁচ শতাধিক স্থাপনা নিয়ে মিরসরাইয়ে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পনগর। আবার মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দরসহ হচ্ছে ৭২টি মেগা প্রকল্প। আনোয়ারায় আছে কোরিয়ান ইপিজেড, চীনা শিল্পাঞ্চল। এসব প্রকল্পের পণ্য পরিবহনে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে এ টানেল। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য কক্সবাজারে নিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে টানেল। আবার নদীর ওপারে নতুন করে নগরায়ণ করারও সুযোগ তৈরি করেছে টানেল।’