এক ‘ফু’ দিয়ে চলে সর্বরোগের চিকিৎসা!
মোঃ রাছেল রানা, প্রধান সম্পাদক
কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের তোফাজ্জল পাগল। কয়েক বছর আগেও তাকে এলাকার সবাই এ নামেই চিনতেন। তার নাম এখন তোফাজ্জল কবিরাজ। এক ‘ফু’ দিয়েই জটিল ও কঠিন রোগসহ নানা রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। ফি নয়, পিরের আস্তানায় ওরসের কথা বলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তোফাজ্জল কবিরাজ।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় কিচক-মোসলেমগঞ্জ সড়কে নুনুজ বাজারের পশ্চিম পাশে শ্রীপুর গ্রাম। নুনুজ বাজার থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত মানুষের ভিড়। সবাই কবিরাজের সামনে দাঁড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে কবিরাজ তোফাজ্জল সাদা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি ও মাথায় টুপি পড়ে চেয়ারে বসে আছেন। আর তিন পাশে বসে আছেন তার কয়েকজন লোক। সামনে রোগীরা দাঁড়িয়ে আছেন, ফু দিচ্ছেন কবিরাজ। রোগীরা পিরের আস্তানায় ওরসের জন্য একটি পাতিলে টাকা ফেলে দিচ্ছেন এবং তোফাজ্জলের পা ধরে সালাম করে চলে যাচ্ছেন। এরপর কবিরাজের লোকজন পাতিলের টাকাগুলো ভাঁজ করে বান্ডিল করছেন। এভাবেই চলছে ভণ্ড কবিরাজ তোফাজ্জল পাগলার চিকিৎসা।
নারী-পুরুষকে সামনে নিয়ে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে প্রায় কয়েক বছর থেকে সর্বরোগের চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে কবিরাজের বিরুদ্ধে। তার বাড়িতে প্রতিদিন গড়ে ২০০- ৩০০ লোকের সমাগম হয়। আর শুক্রবারে দুই থেকে আড়াই হাজার লোক আসেন।
কবিরাজের ছেলে ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তোফাজ্জল পাগলা একই জেলার পাঁচবিবি উপজেলার উত্তর সরাইল গ্রামের পির হেলাল ও বেলাল বাবার মুরিদ। তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সেখানে যাতায়াত করেন। দুবছর আগেও তিনি পাগল ছিলেন। এরপর পির বাবার দোয়ায় তিনি ভালো হন। গত দুবছর ধরে তিনি পির বাবার আশির্বাদে বাড়িতে বসে এমন চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। ‘ফু’ দিয়ে তিনি ডায়াবেটিস, কিডনি, ব্যথাসহ জটিল ও কঠিন রোগ ভালো করছেন। তিনি চিকিৎসা বাবদ কোনো টাকা নেন না। তবে পিরের আস্তানায় ওরসের জন্য যে যা পারেন তাই পাতিলে ফেলে যান।
স্থানীয়রা জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকায় দালাল সেট করেছেন। তাদের মাধ্যমে সর্বরোগের চিকিৎসার কথা প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিজেরাই তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলেও প্রচার করছেন। এসব কথা শুনে বিশেষ করে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সহজ-সরল মানুষগুলো ছুটে আসেন তোফাজ্জল পাগলার কাছে। তার রোগীদের বেশিরভাগই নারী। সুযোগ বুঝে পিরের কথা বলে তিনি টাকা হাতিয়ে নেন।
কবিরাজ তোফাজ্জল বলেন, পির বাবার উসিলায় আজ আমি পাগল থেকে কবিরাজ হয়েছি। জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছি। সবাই আমার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হচ্ছেন। প্রতিদিন রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে যা দেয় তা হাত দিয়েও ধরিনা। পাতিলে ফেলে যায়। আর সেই টাকা পিরের দরবারে পাঠিয়ে দেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, আসলে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ওই কবিরাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।