গ্রেপ্তার এড়াতে অংশ নেননি বিএনপির শীর্ষ নেতারা


বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের মানববন্ধনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউই অংশগ্রহণ করেননি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার এড়াতেই মানববন্ধনে অংশ নেননি তারা। এমনকি মামলায় অভিযুক্ত নেতাদের উপস্থিত না থাকার বিষয়ে কেন্দ্র থেকেই নির্দেশনা ছিল। তবে মানববন্ধনে অংশ নিতে রোববার সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার পরিবারের সদস্যরা শহরের নবাববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীর পরিবারের অন্তত ২০ সদস্য। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, গ্রেপ্তার ও গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের ছবি বহন করতে দেখা যায়। মানবন্ধনে বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আইনজীবি আব্দুল বাছেদ সভাপতিত্বে করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির জেলা শাখার সাবেক আহবায়ক ও আইনজীবি একেএম সাইফুল ইসলামসহ মহিলা দলের সভাপতি লাবলি রহমান প্রমুখ। তবে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, যুবদলের আহবায়ক খাদেমুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম শুভ ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইদুর ইসলামসহ শীর্ষ নেতাদের কেউই মানবন্ধনে অংশগ্রহণ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, মামলা অভিযুক্ত নেতাদের উপস্থিত না থাকার বিষয়ে কেন্দ্র থেকেই নির্দেশনা ছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার বিএনপি সদস্য মতিনের স্ত্রী লায়লী বেগম বলেন, আমার স্বামীর কী অপরাধ ছিল? উনি তো কারো ক্ষতি করেননি।এখন পর্যন্ত পুলিশ কা্উকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। স্বামীকে হারিয়েছি, এখন তার বিচারও দেখে যেতে পারবো না? গ্রেপ্তার বিএনপি সমর্থক শরিফুর ইসলামের স্ত্রী শামিমা লিমা বলেন, বাড়িতে ছোট তিনটা সন্তান। আয় করার কেউ নেই। উনি এখন ক্রাউন সিমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন, কোন নাশকতার সঙ্গে জড়ানোর প্রশ্নই আসেনা। গত ৪ নভেম্বর শহরের মালগ্রাম অফিস থেকেই এসে তিনি ৩ বছরের ছোট ছেলের ওষুধ নিতে সবুজবাগে বাড়ির সামনে বের হোন। পুলিশ সেখান থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৩ নভেম্বর এক মামলায় জেলে পাঠায়। বাচ্চাদের নিয়ে এখন কি করবো? উনার চাকরিও আর থকাবে না। দ্রুত তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হোক আর কিছুই চাইনা। বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও আইনজীবি একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, যাকে ইচ্ছা পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। বিএনপি সমর্থন করলেই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে? সরকারের রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘরছাড়া। তাদের পরিবারের সদস্যদের মানবেতর জীবনযাপন কেউ দেখে না। বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আইনজীবী আব্দুল বাছেদ বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত বগুড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৩৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এইসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আড়াই হাজার। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫০০ এর বেশি নেতাকর্মী, যাদের বেশিরভাগই এজাহারভুক্ত নন। শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত না থাকার বিষয়ে এই নেতা বলেন, সবার নামেই ১০ থেকে ১৫ টি মামলা আছে। এখানে আসলে নির্ঘাত গ্রেপ্তার হবেন। সামনে কঠোর আন্দোলনের স্বার্থে তাদের গ্রেপ্তার এড়ানো জরুরি। দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবেই কাউকে মানবন্ধনে আনা হয়নি। এদিকে বিএনপির মানবন্ধনকে ঘিরে বগুড়া শহরজুড়েই সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ও বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বগুড়ার পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, কারও কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয়না। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ।