চতুর্থবার থ্রি মিলিওনিয়ার ক্লাবে চট্টগ্রাম বন্দর


বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দিক থেকে চতুর্থবার ‘থ্রি মিলিওনিয়ার ক্লাব’-এ রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২৩ সালের আরও কয়েকদিন বাকি। এরই মধ্যে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর ৩০ লাখ ৪ হাজার ৫০৫ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে ফেলেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছে, বছর শেষে ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন বা ৩১ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর হ্যান্ডলিং করেছিল ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউএস কনটেইনার। এদিকে কার্গো (খোলা) পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে এ বন্দর ২০২৩ সালে রেকর্ড গড়ার আশা করছে। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। চলতি বছরের বাকি ৬ দিন যোগ করলে বিদায়ি বছরে কার্গো হ্যান্ডলিং ১২ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে। বন্দরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো বছরে ১২ কোটি টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়নি। ২০২২ সলে এ বন্দরে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক মোট আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনারজাত পণ্যের ৯৮ শতাংশ পরিবাহিত হয়ে থাকে। বর্তমানে এ বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফট (পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ) ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর ইতিহাসে প্রথম ২০১৯ সালে তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে রেকর্ড গড়ে। তবে করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ২০২০ সালে ঘটে ছন্দপতন। ওই বছর হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন কনটেইনার। অবশ্য পরের বছর ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ৩ দশমিক ২১ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ওই বছর। ২০২২ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কিছুটা কমলেও তা ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখের নিচে নামেনি। বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। তিনি বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সরবরাহ চেইনে বাধার ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মন্থরতা পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এর উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধিও পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়, তা মূলত বাংলাদেশেরই অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন। চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র ফুটে ওঠে। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি শত প্রতিকূলতার মাঝেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।’ চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, এ বন্দরের মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে জাহাজসেবা এবং মালামাল হ্যান্ডলিং খাত থেকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী সেবা প্রদানের বিপরীতে মাশুলাদি আদায় করে থাকে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আয় ৭ শতাংশ বেড়েছে, রাজস্ব ব্যয় ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং রাজস্ব উদ্বৃত্ত প্রায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।