মাগুরায় নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভোটে আছেন, প্রচারে নেই।
দিপল ঘোষ, জেলা প্রতিনিধি, মাগুরা, খুলনা
মাগুরায় শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীহীন আসন দুটিতে প্রচারে কার্যত নৌকা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নামে আছেন কিন্তু নির্বাচনী প্রচার বা গণসংযোগে কম। মাগুরা জেলায় ২টি আসনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চিন্তামুক্ত। এই আসন দুটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় জয়ের ব্যাপারে নৌকার প্রার্থীরা অনেকটাই নির্ভার।
মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। একজন বাদে এ আসনে সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিচ্ছেন। তবে ভোটের মাঠে কেবল নৌকার প্রার্থী সাকিব আল হাসানকেই নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন তিনি। ভোটারদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি চলছে উঠান বৈঠকও কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচারে দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। ভোটাররা বলছেন, ভোটের সময় কাছাকাছি এলেও নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত প্রচারণা করতে দেখা যায়নি। এমনকি জেলা শহর থেকে শুরু করে সংসদীয় আসনে নৌকা ছাড়া কোথাও তেমন পোস্টার সাঁটানো নেই। নৌকা ছাড়া বাকি প্রার্থীদের তাঁরা চেনেনও না।
সাকিব আল হাসান দ্বাদশ নির্বাচনে এই প্রথম আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন, কাগজে-কলমে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী চারজন। তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টির মো: সিরাজুস সায়েফিন (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাগুরা ১ ও ২ আসনের প্রার্থী দলটির চেয়ারম্যান নিজেই এ্যাড: কাজী রেজাউল হোসেন (ডাব), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কে এম মোতাসিম বিল্লাহ (টেলিভিশন), তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ও তৃণমূল বিএনপির সঞ্জয় কুমার রায় (রনি) (সোনালী আঁশ)। তাঁদের মধ্যে ভোটের মাঠে কিছুটা প্রচার করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ কংগ্রেসকে। এদিকে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কোনো প্রচারণা শুরু থেকে নেই। এ বিষয়ে প্রার্থী মো: সিরাজুস সায়েফিন বলেন, তিনি কোনো প্রচার করছেন না। দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি নীরব রয়েছেন। যদিও সাকিব আল হাসান তাঁর নির্বাচনের মাঠে সকল প্রার্থীকেই সমান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবেই দেখছেন।
এদিকে মহম্মদপুর, শালিখা ও মাগুরা সদরের চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মাগুরা-২ আসন। এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিগত চারবারের এমপি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এ্যাড: শ্রী বীরেন শিকদার নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। তিনিও পিছিয়ে নেই নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায়। এখানে নৌকার বিপরীতে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। লাঙ্গলের নির্বাচনী প্রচার ছাড়া আর কারো কোনো তৎপরতা নাই। নৌকার বিপরীতে এই আসনে জাতীয় পার্টির মো: মুরাদ আলী (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের এ্যাড: কাজী রেজাউল হোসেন (ডাব), তৃণমূল বিএনপির মো. আখিদুল ইসলাম (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মো: আসাদুজ্জামান (একতারা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মশিয়ার রহমান (ঈগল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনেও নৌকার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার বা গণসংযোগ একেবারেই কম।
মাগুরার দুটি আসনে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে একতারা, টেলিভিশন, সেনালী আঁশ, ডাব, লাঙ্গল ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার মতো অবস্থানে নেই। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের প্রচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মাগুরায় আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রচার ছাড়া অন্যদের ব্যানার-পোস্টার, মাইকিং ও গণসংযোগ তেমন চোখে পড়ছে না। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু প্রতীকের অল্প কিছু পোস্টার দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এসব প্রতীক বা দল কোনোটাই পরিচিত নয়। তবে পুরো নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টারে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও মাগুরায় দুই আসনের আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ঢিলা ঢালা প্রচার চোখে পড়ে। জোরালো প্রচার আছে, নির্বাচনী এলাকাজুড়ে পোস্টার আছে, গণসংযোগ আছে, মাইকিং আছে—তবে তা মূলত নৌকার। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রচারে কোথাও নামকাওয়াস্তে রয়েছেন, কোথাও একেবারেই অনুপস্থিত। কোথাও কোথাও কিছু পোস্টার ও মাইকিং দেখা গেলেও দেখা মিলছে না প্রার্থী বা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রচার ও প্রচারণায়। নেই কোন গণসংযোগও।
এবারের নির্বাচন বর্জন করছে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দল। ভোটে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টির প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে মাগুরায় দুটি আসনে আওয়ামী লীগের বা কোন শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় নৌকার জয়ধ্বনি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাগুরার সাকিব আল হাসানের জয়জয়াকার ও আশাবাদী বীরেন শিকদারের জনপ্রিয়তায় নৌকার প্রার্থীরা এবারের এই দ্বাদশ নির্বাচনে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দেওয়ার উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।