বরিশালের ছয় আসনে ঝুঁকিতে নৌকা-লাঙ্গল
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন আর সংসদ-সদস্য হয়েও ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারছেন না নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীরা। এই পরিস্থিতি বরিশাল বিভাগের ৬ নির্বাচনি এলাকায়। এসব আসনে স্বতন্ত্র জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভোটের ৩ দিন বাকি থাকতে এমন আভাসই মিলেছে এসব নির্র্বাচনি এলাকা থেকে। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা ৩ থেকে পঞ্চমবারের মতো পালন করছেন সংসদ-সদস্যের দায়িত্ব। জীবনে কোনো নির্বাচনে হারেননি এমনও আছেন দু-একজন।
পিরোজপুর-১ (সদর-ইন্দুরকানী-নাজিরপুর) : এখানে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাড. রেজাউল করিম এমপি। তার বিরুদ্ধে প্রার্র্থী ২ বারের সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএমএ আউয়াল (ঈগল)। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এখানে এখন পর্যন্ত একজন নিহত ও আহত হয়েছেন অর্ধশত। আওয়ামী লীগের বড় একটা অংশ কাজ করছে ঈগলের পক্ষে। আউয়ালের দুই ভাই পিরোজপুরের পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও এই পরিবারের। এরা সবাই নেমেছে ঈগলের পক্ষে। শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে রেজাউলের। গত ৫ বছরে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও হচ্ছে আলোচিত। একেএমএ আউয়াল বলেন, ‘সত্যিকারের জনপ্রিয়তা যাচাই হওয়ার সুযোগ এসেছে। ৭ তারিখ সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ রেজাউল করিম এমপি বলেন, ‘সন্ত্রাস আর ভোটে জেতা এক নয়। যারা শান্তি সমৃদ্ধি চায় তার নৌকার পক্ষেই থাকবে।’
পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ) : এ আসনে শক্ত লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জোটের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। ঈগল নিয়ে মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক জেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। মহারাজ বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ঈগলের জয় নিশ্চিত।’ জেপির (মঞ্জু) প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহিম হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনি এলাকার উন্নয়ন সাক্ষ্য দেবে এমপি মঞ্জুর পক্ষে।’
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) : এলোমেলো পরিস্থিতি এই নির্বাচনি এলাকায়। বর্তমান এমপি দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীকে মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি। ঈগল নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের ছাড় দেয়া এই আসনে লাঙ্গল নিয়ে আছেন জাতীয় পার্টির মাশরেকুল আজম রবি। আরও আছেন কলার ছড়ি প্রতীকের শাহনেওয়াজ শামিম। এই শামিম আবার এখানে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আশরাফুর রহমানের ভাই। এদের আরেক ভাই বর্তমানে মঠবাড়িয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান। ভাই শামিমের পক্ষে মাঠে আছেন দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ। দলের একটা বড় অংশও আছে শামিমের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) : আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু। ট্রাক নিয়ে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের আতিকুর রহমান। দলের বেশ বড় একটা অংশ আছে তার সঙ্গে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে জোটের লাঙ্গল আর বিএনপির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন আতিক। নির্বাচনি এলাকায় সমানে সমান লড়ছেন এই দুই নেতা। জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী উল্লেখ করে আতিক বলেন, ‘ভোট এলেই শুধু যিনি এলাকায় আসেন তাকে সাধারণ মানুষ আর চায় না। এটি আওয়ামী লীগের আসন। জোটের শরিক বলে লাঙ্গল নিয়ে নৌকার ভোটের এমপি হওয়ার সুযোগ কাউকে দেব না।’ লাঙ্গলের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি বলেন, ‘এই এলাকায় শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা আছে আমার সঙ্গে। তারাই আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) : ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস আছে এখানেও। জাতীয় পার্টির এই আসনটি এবার আর তাদের দেয়নি আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ মল্লিক। বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না আমিন আছেন লাঙ্গল নিয়ে। তবে এই দুজনার মাথাব্যথার কারণ এখন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে ভোটের মাঠে নামা চুন্নু এরইমধ্যে আাভাস দিয়েছেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার। পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ডাকুয়াসহ দলের অধিকাংশরাও আছেন তার সঙ্গে। জয়ী হওয়া প্রশ্নে চুন্নু বলেন, ‘আমাদের চাওয়া ছিল আওয়ামী লীগের এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে আসুক। আমরা নৌকা পেলাম ঠিকই কিন্তু এমন একজনকে তা দেয়া হলো যার সঙ্গে এলাকার কোনো যোগাযোগ নেই। ৭ তারিখেই প্রমাণ হবে সাধারণ মানুষ কাকে ভালোবাসে।’ হাফিজ মল্লিক বলেন, ‘নৌকার এমপি না থাকায় এখানে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাকেরগঞ্জের মানুষ এবার আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করবে না।’
বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) : বারবার নির্বাচিত এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নৌকার বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন কাঁচি প্রতীকে নির্বাচনে নামা গোলাম সরোয়ার ফোরকান। এলাকার টান সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। বিষখালী নদীতে বিভক্ত এই নির্বাচনি এলাকার পূর্ব পাড়ে আমতলী-তালতলী উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজারের কিছু বেশি। এখানে একমাত্র প্রার্থী ফোরকান। ২ লাখ ৩৮ হাজার ভোটারের সদর উপজেলায় এমপি শম্ভু ছাড়াও রয়েছেন গোলাম সরোয়ার টুকু (ঈগল) ও খলিলুর রহমান (ট্রাক)। বিষখালীর এপাড়-ওপাড় নিয়ে এখানে আগে থেকেই ছিল বিভক্তি। সেই বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন ফোরকান। জয় নিশ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওপারের এমপির ভালোবাসা এ পাড় পর্যন্ত পৌঁছায় না। ৭ তারিখ ফয়সালা হবে।’ এমপি শম্ভু বলেন, ‘এটি আওয়ামী লীগ তথা নৌকার আসন। ভোটাররা আর যাই হোক নৌকার বিরুদ্ধে যাবে না।’
ওই ৬ আসনের পাশাপাশি পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) এ নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি মুহিববুর রহমানের সঙ্গে সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমানের (ঈগল) লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এখানে নৌকাই এগিয়ে থাকবে বলে ধারণা সবার। এখানে আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন (ট্রাক) নামে আওয়ামী লীগের আরও একজন প্রার্থী থাকায় জয় পাওয়া অনেকটাই সহজ হবে নৌকার জন্যে। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জোটের প্রার্থী নৌকার রাশেদ খান মেনন এমপির বিরুদ্ধে ঈগলের ফাইয়াজুল হক রাজু এবং পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে নৌকার এসএম শাহজাদা সাজু এমপি’র বিরুদ্ধে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবুল হোসেন (ঈগল) মাঠে থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ দুটি আসনে নৌকাই জিতবে মন্তব্য সাধারণ ভোটারদের।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।