ভোটে ধরাশায়ী হয়ে আলোচনায় ‘কিংস পার্টি’র নেতারা


নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পরও আলোচনায় রয়েছে ‘কিংস পার্টি’ নামে খ্যাত তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন থেকে বিদ্যুৎগতিতে নিবন্ধন পাওয়া এ রাজনৈতিক দলগুলো ২৭০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সবকটিতে হেরে গেছে। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, বিপুল প্রত্যাশার এ নির্বাচনে দু’একজন প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার জামানাতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিংস পার্টিগুলোর এ ভরাডুবিকে অতি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে কিংস পার্টি কিংস পার্টির ধারণা বাংলাদেশে মুখরোচক বিষয় হয়ে ওঠে ২০০৭-০৮ সালে ‘এক-এগারো’র সরকারের আমলে। সে সময় জরুরি অবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও বিএনপির সাবেক নেতা ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি বা পিডিপি। এ দলটি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৪৫ দিন আগে নিবন্ধন পায়। ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর নিবন্ধন পেয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। সে সময় এ দুটি রাজনৈতিক দলকেই ‘কিংস পার্টি’ নামে অভিহিত করা হতো। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দুই রাজনৈতিক দলের ওপর ভর করে দেশে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। সেই সঙ্গে ব্যর্থ হয় এ নতুন রাজনৈতিক দল দুটি। নতুন তিন রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও গত এক বছর ধরেই আবারও ‘কিংস পার্ট’ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ সরগরম হয়ে ওঠে। গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন লাভ করে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি। গত ১০ আগস্ট একইদিনে নতুন করে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্ট (বিএসপি)। এ তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূল আলম খন্দকারের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি এবারের নির্বাচনে ১৩৫টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের নেতৃত্বাধীন বিএনএম মনোনয়ন দিয়েছিল ৫৬টি আসনে আর বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ৭৯ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আর ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট পেয়েছে তৃতীয় হয়েছেন শমসের মবিন চৌধুরী। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমূর আলম খন্দকার অংশ নিয়ে জামানত হারান। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজী গোলাম দস্তগীর এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। আর তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়াই করেন তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৩৩৭ ভোট। আর বিজয়ী প্রার্থী মহিউদ্দিন পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট। বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ফরিদপুর-১ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে হেরে গেছেন। এ দলটির মহাসচিব ড. মুহাম্মদ শাহ্‌জাহান চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছেন। পাবনা-২ আসনে সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী বিএনএমের হয়ে অংশ নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৩৮২ ভোট।