দলীয়ভাবে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে শরিকরা


আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা-কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেবে না দলটি। এসব নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে কোনো সমঝোতাও করবে না ক্ষমতাসীনরা। বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনের মতোই জোট শরিকদের সবাইকে প্রার্থী দিতে উৎসাহ দেবে আওয়ামী লীগ। জোট শরিকরাও নির্বাচনগুলোতে নিজেদের মতো আলাদাভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছে। জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, জাতীয় সরকার নির্বাচন সাধারণত জোটগতভাবে করা হয় না। এখানে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলীয় প্রতীক দেওয়ার পেছনে একটা কারণ ছিল, এখন হয়তো উনারা মনে করছেন সেটা নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাচন আমাদের দলীয় মনোনয়নেই করেছি। সামনে দিনে কি করব সেটা দলীয় ফোরামে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কিছু দিনের মধ্যেই বসব। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দলের সিদ্ধান্ত হলো আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। যেখানে যেখানে আমাদের যোগ্য প্রার্থী আছে, সেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দেব। আমরা আশা করি, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি আরও বলেন, এখানে যেহেতু আওয়ামী লীগ নির্বাচন উন্মুক্ত রাখছে, ফলে জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিষয় তো আর আসছে না। একই বিষয়ে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এটা ভালো হয়েছে। কারণ, স্থানীয় সরকারে দলীয় মার্কা দিলে অনেক সময়ই সংঘর্ষ-মারামারি হয়। ফলে নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত। নিজেদের নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় তো অনেক বড় পরিসরে হয়। আমাদের দলের তো সারা দেশে এত প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতাও নেই। তবে যেখানে যেখানে আমাদের যোগ্য প্রার্থী আছেন, সেখানে দলের প্রার্থীরা অংশ নেবেন। জানতে চাইলে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেন বলেন, আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, এবারও করব। আওয়ামী লীগের নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কিন্তু উন্মুক্তই ছিল। তখন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আশরাফ আর ১৪ দলের সমন্বয়ক ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সে সময় ১৪ দলের এক সভায় সৈয়দ আশরাফ এই দলীয় প্রতীকে করার প্রস্তব উপস্থাপন করেন। আমি তখন এর প্রতিবাদ করেছিলাম। ফলে আওয়ামী লীগ এখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটাকে আমি স্বাগত জানাই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সামনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এমন প্রেক্ষাপটে এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের জরুরি কার্যনির্বাহী সভায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর যেসব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের ভোট হতে যাচ্ছে, তাতে দলীয় প্রতীক নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন-উন্মুক্ত নির্বাচন হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং ভোটার বাড়বে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, যেহেতু উপজেলা পরিষদসহ সামনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা অংশ নিচ্ছে না, তাই ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গেও কোনো সমঝোতা হচ্ছে না। বরং জাতীয় নির্বাচনের মতোই জোট শরিকদের সবাইকে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেবে আওয়ামী লীগ। যাতে করে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে তা দেখানো যায়। এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেও ১৪ দলীয় জোটের তৎকালীন সমন্বয়ক প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছিলেন-‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ১৪ দল জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনকে অর্থবহ ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে জোটভুক্ত দলগুলো দলীয়ভাবে অংশ নেবে।’ ওই নির্বাচনে ১৪ দলের কয়েকটি দলের প্রার্থীরা নিজেদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন হবে। একই দিন কয়েকটি পৌরসভাতেও ভোট হবে। কাছাকাছি সময়ে প্রথম ধাপে শখানেক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হতে পারে। এদিকে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন-উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো দল দলীয় প্রতীক না দিলেও আইনের ব্যত্যয় হবে না।