অর্থব্যয় ও ভোগান্তি বাড়ছে শিক্ষার্থীর
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। তবে কার্যত এ পদ্ধতিতে সুফল মেলেনি। এতে উলটো ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। শিক্ষার্থীদের অর্থব্যয় এবং একাধিক ক্যাম্পাসে ছোটাছুটি আছে আগের মতোই।
অন্যদিকে বশ্ববিদ্যালয়গুলোও বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাচ্ছে না শিক্ষার্থী। ফলে শুরুর আগেই কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ে যাচ্ছে। গত বছর আসন পূর্ণ করতে পারেনি বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়। এমন পরিস্থিতিতে কাল থেকে জিএসটি (সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) গুচ্ছভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শুরু হচ্ছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির আবেদন। যা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ভর্তিচ্ছুরা জানান, এই পদ্ধতিতে প্রথমে ফি দিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।
এরপর প্রাপ্য ফল নিয়ে আবার আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোথাও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ অনুযায়ী একাধিক আবেদন করতে হয়। আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। এই আবেদন করার জন্য তাদের আলাদা ফি দিতে হয়। এতে আবেদন ফির সঙ্গে যাতায়াত এবং অন্যান্য খরচও হয়। ফলে অর্থব্যয় ও ভোগান্তি বাড়ছে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে প্রায় ৬ মাস লেগেছিল। এতেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আসন পূর্ণ করতে পারেনি। বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সেখানে প্রার্থী পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীদের দিক থেকে বড় সমস্যা ছিল বারবার আবেদনে টাকা খরচ করতে হয়েছে।
সঙ্গে যাতায়াত খরচ। এতে গুচ্ছভুক্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করতেও দেরি হয়েছে। এতে সেশনজটসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের আবেদন ফি দেড় হাজার টাকা ও বিশেষায়িত প্রতিটি বিষয়ের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করতে হয়।
জানা গেছে, গত বছর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৮ আসন ফাঁকা রয়ে গেছে। এছাড়া কোটায় ১০০টি আসনের মধ্যে ৭৫টি ফাঁকা পড়ে আছে। ভর্তি কার্যক্রমে নানা জটিলতায় এরকম আরও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত আসন পূরণ করতে পারেনি।
দেশে বর্তমানে অনুমোদিত ৬০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৫৬টির শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বাকিগুলোর মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি কার্যক্রমের প্রস্তুতি এখনো শুরু হয়নি। এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাশ করেছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার শিক্ষার্থী। এতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। তবে জিপিএ-৩.৫ পর্যন্ত ভালো ও মধ্যম মানের ফলধারী হিসাবে চিহ্নিত শিক্ষার্থী ৭ লাখ ৬ হাজার ৩৭৯ জন।
সাধারণত এসব শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভিড় জমায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকা আসন আছে মাত্র ৯০ হাজার। অর্থাৎ, প্রতি আসনের বিপরীতে এবার গড়ে ৮ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ২০২০-২০২১ সেশন থেকে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি চালু করা হয়। চলতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর সঙ্গে নতুন তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর গুচ্ছতে যুক্ত হবে। এ নিয়ে গুচ্ছভুক্ত হচ্ছে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি গুচ্ছে, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হবে।
উল্লিখিত ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্য ৩টি গুচ্ছ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৪টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হয় জিএসটি গ্রুপ। ৩ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট) এবং কৃষি ও কৃষিপ্রধান ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুটি গ্রুপ করা হয়েছে। এরবাইরে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও বুয়েট আলাদা পরীক্ষা নেয়। এছাড়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসহ এ ধরনের বিশেষভাবে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে।
এদিকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগের কারণে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)।
২৯ জানুয়ারি ১২৭তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইবিকে এবার গুচ্ছ পদ্ধিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। শনিবার ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষকরা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে ইউজিসি যে নির্দেশনা দিয়েছে তা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন।
ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির শুরু দিকে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। বর্তমানে এই সমস্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। সামনে এসব বিষয় আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত খরচ কমানোর বিষয়ে গুচ্ছের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিবেচনা করা উচিত। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে অর্থ সংকটে পড়ছে। সেখানে আমরা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা দুর্ভোগ ও সমস্যার বিষয় বিবেচনা করে আমরা বছরে দুইবার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। এ বিষয়ে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) কাজ করছে।
অধ্যাপক আলমগীর বলেন, এ বছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যায়গুলো থেকে বের হয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।