ইউক্রেনে ‘আত্মহত্যার বাঁশিওয়ালা’


লিওনিড জাকুতেঙ্কো। রহস্যময় এক ব্যবসায়ী। ঠিক যেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো। যার সংস্পর্শ মানেই চিরতরে হারিয়ে যাওয়া! আত্মহত্যার জন্য সারা বিশ্বে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিক্রি করেন জাকুতেঙ্কো। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিষের চালান দেন সর্বত্র। যুক্তরাজ্যের অন্তত ১৩০ জনের মৃত্যুর কারণ তিনি। যারা নিজের জীবন নিতে চান তাদের আরও উৎসাহিত করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার পরিষেবার প্রচারণা চালিয়ে আসছেন কয়েক বছর ধরে। এতদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও এবার হাতেনাতে ধরা পড়েছেন ইউক্রেনের ‘আত্মহত্যার বাঁশিওয়ালা’ জাকুতেঙ্কো। নিজ বাসস্থান ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকেই তাকে শনাক্ত করেছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জাকুতেঙ্কোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিবিসি। আত্মহত্যার জন্য আগ্রহী ক্রেতা হিসাবে জাহির করে জাকুতেঙ্কোকে ধরার চেষ্টা চালিয়েছে অনেকবার। কয়েকবার ব্যর্থ হলেও অবশেষে কিয়েভ থেকে সরাসরি তাকে শনাক্ত করেছে বিবিসি। শনিবার প্রকাশ করা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিয়েভ শহরের ছোট একটি ফ্ল্যাটে তার নাগাল পায় সংবাদ সংস্থাটি। তবে প্রতিবেদনে ওয়েবসাইট অথবা বিক্রি করা রাসায়নিকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে বিষ সরবরাহ করে আসছিলেন জাকুতেঙ্কো। বিবিসির অনুসন্ধানে এটা প্রমাণিত হয়েছে, সেই বিষ যদি খুব অল্প পরিমাণেও মানুষের শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়, তবে তার পরিণতি মৃত্যু। কিন্তু বিবিসির কাছে সবকিছু অস্বীকার করেছেন জাকুতেঙ্কো। এমনকি মৃতদের পরিবারকে কী বলার আছে জিজ্ঞেস করা হলে জাকুতেঙ্কো এ সময় উত্তর দেন, ‘আপনি কী বলছেন, আমি বুঝতে পারছি না।’ অথচ বিষ বিক্রির সময় বিবিসির সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা বলেছেন জাকুতেঙ্কো। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জাকুতেঙ্কো যে বিষ সরবরাহ করতেন সেই বিষ সম্পর্কে আত্মহত্যার একটি ফোরামে বেশ খোলাখুলিভাবেই আলোচনা হতো। কিভাবে এটি কিনতে হবে এবং কিভাবে এটি ব্যবহার করে মৃত্যু নিশ্চিত করা যাবে সে বিষয়ে সেখানে পরামর্শ দেওয়া হতো। ২০২৩ সালের মে মাসে একই ফোরাম ব্যবহার ও রাসায়নিক বিক্রির জন্য অন্য একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কানাডায় গ্রেফতার হওয়া কেনেথ ল ৪০টিরও বেশি দেশে ১ হাজার ২০০টির বেশি পার্সেল করেছিলেন বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে ১৪টি হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। কেনেথ বিশ্বজুড়ে আরও শত শত মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হয়। জাকুতেঙ্কোর বিষয়ে ইউকে এবং ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে বিবিসি।