অনেক কিছু ভেবেচিন্তেই কুয়াকাটা বিমানবন্দর
অনলাইন নিউজ ডেক্স
নামে কুয়াকাটা বিমানবন্দর হলেও প্রাথমিকভাবে এর স্থান নির্বাচন হয়েছে সৈকত থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বরগুনার আমতলী উপজেলার ৩ হাজার একর জমিতে এটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের জন্য সম্ভাব্য ওই স্থান পরিদর্শন করেছে বেবিচকের বিশেষ টিম। কেবল পর্যটননির্ভর বন্দর পরিচালনা লাভজনক হবে না বিবেচনায় সৈকত থেকে এতটা দূরে এটি করার পক্ষে তারা। সেক্ষেত্রে কুয়াকাটার পাশাপাশি দক্ষিণ উপকূলের উদীয়মান শিল্প এলাকার কেন্দ্রে হবে এর অবস্থান। ফলে বন্দর লাভজনক হওয়ার পাশাপাশি রানওয়ের সুবিধা পাবে সবাই।
১৯৯৮ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এরপর থেকেই মূলত সেখানে শুরু হয় সরকারি পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কম সময়ে যাতায়াতের সুবাদে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক যাচ্ছেন কুয়াকাটায়। ছুটির দিনে সেখানে থাকা ২শ’র মতো হোটেল-মোটেল ছাপিয়ে সৈকতেও রাত কাটাতে হয় অনেককে। সৈকতভিত্তিক পর্যটন জমে ওঠার পাশাপাশি কুয়াকাটা সংলগ্ন কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দর ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ গড়ে ওঠে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বর্তমানে কেবল কলাপাড়ায়ই রয়েছে ৩টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পার্শ্ববর্তী বরগুনার তালতলীতে রয়েছে একটি। প্রস্তাবিত পটুয়াখালী ইপিজেডের অবস্থানও এগুলোর বেশ কাছে। পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক নয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে সেখানে গড়ে উঠছে আরও নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ক্রমবর্ধমান এই পর্যটন ও শিল্প এলাকায় একটি বিমানবন্দর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ওঠে আলোচনা। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গত বছরের ১১ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায়ও আলোচিত হয় বিষয়টি। সেখান থেকে কুয়াকাটায় বিমানবন্দর স্থাপন বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয় নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরে। অধিদপ্তর এই বিষয়ে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বললে তারা চিঠি দেয় বেবিচককে। পুরো বিষয়ে ধারণা পেতে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বেবিচক। সংস্থার পরিচালক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলামকে করা হয় এর প্রধান। ১৭ ফেব্রুয়ারি কমিটির সদস্যরা আসেন কলাপাড়ায়। পরিদর্শন করেন বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান। যার অবস্থান কলাপাড়া ও আমতলী উপজেলায়। দুই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৪টি গ্রামকে পছন্দ করেন তারা।
কমিটির প্রধান জহিরুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর তো ছোটখাটো কোনো বিষয় নয়। আমাদের প্রস্তাবনায় এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৬ ও ২ কিলোমিটার। এজন্য দরকার হবে ৩ হাজার একর জমি। যে জায়গাটি আমরা দেখেছি সেখানে এই জমির সংস্থান করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি খুব একটা নিতে হবে না। আলোচ্য স্থানে সরকারের বিপুল আয়তনের জমি রয়েছে। ঘরবাড়িসহ তেমন কোনো স্থাপনাও ভাঙা পড়বে না। বিপুল আয়তনের এই জমি যদি কিনতে না হয় তাহলে সরকারের ব্যয় অনেক কমে যাবে।
পরিদর্শন দলের সঙ্গে থাকা কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, কলাপাড়া ও আমতলীর সীমান্তবর্তী চাকামইয়া এবং নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এই বিমানবন্দর নির্মাণের চিন্তা করছে বেবিচক। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় এটাই সঠিক। চাকামইয়া ইউনিয়নটি কলাপাড়ার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। এর দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটারের বেশি। বিশাল এলাকা হলেও ভোটার সংখ্যা মাত্র ১৪ হাজার। জনবসতি কম হওয়ার পাশাপাশি এখানে সরকারের বিপুল আয়তনের খাস জমি রয়েছে। যতদূর জানি পার্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নেরও প্রায় একই অবস্থা। এর বিপরীতে কুয়াকাটায় এত বিপুল আয়তনের খাস জমি যেমন নেই তেমনি পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে জমির দামও অনেক বেশি। কুয়াকাটায় করতে গেলে এই বিমানবন্দর নির্মাণ ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
কলাপাড়া ও তালতলী মিলিয়ে বিমানবন্দর স্থাপনের প্রস্তাবে কুয়াকাটার সাধারণ মানুষের মধ্যে খানিকটা অসন্তোষ দেখা দিলেও তার উত্তর দিয়েছেন সেখানকার সংসদ-সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। তিনি বলেন, কুয়াকাটায় যে ২শর মতো হোটেল-মোটেল রয়েছে তার মাত্র ২৮ ভাগ আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন। এসব হোটেলের গ্রাহকরাই প্রধানত হবে বিমানের যাত্রী। তাও কেবল ছুটি আর পর্যটন মৌসুমের দিনগুলোয়। এই স্বল্পসংখ্যক যাত্রী দিয়ে বিমানবন্দর চলবে না। প্রকারান্তরে কলাপাড়ার চাকামইয়ায় বিমানবন্দর হলে সেটা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি পুরো শিল্পাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে। চাকামইয়া থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। এর আশপাশেই অবস্থান পায়রা সমুদ্রবন্দর ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ পুরো শিল্প এলাকার। প্রস্তাবিত পটুয়াখালী ইপিজেড আর বরগুনা জেলাও কাছে হবে। সেক্ষেত্রে পায়রা বন্দরের পণ্য কার্গো বিমানে পরিবহণসহ শিল্প এলাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত মিলে টিকে যাবে বিমানবন্দর। এজন্যই কলাপাড়ার চাকামইয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, স্থান নির্বাচনসহ প্রাথমিক পর্যায়ের কাজগুলো সম্পন্নের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটাকেন্দ্রিক বিমানবন্দর স্থাপনে দেড় হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। সেখানে এবং একনেকে এটি অনুমোদন পেলে আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ শুরু করা যাবে বিমানবন্দরের কাজ। কেবল কুয়াকাটা কিংবা উপকূলীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়, ভবিষ্যতের অনেক কিছু মাথায় নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সমুদ্র সীমান্তের নিরাপত্তা প্রশ্নে ভবিষ্যতে এখানে এয়ার ফোর্সের বেইজও হতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এগোচ্ছি আমরা।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে কুয়াকাটার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাসহ ওই এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক যে হাব তৈরি হচ্ছে তাতে সেখানে বিমানবন্দর প্রয়োজন। সেই বিষয়টিতেই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। স্থান নির্বাচনসহ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে ৮ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তাদের দেওয়া রিপোর্ট আর অর্থ সংকুলান হলেই পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করব আমরা।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।