এক সপ্তাহ পর শুরু হবে পবিত্র রমজান। প্রশাসনের হর্তাকর্তারা ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলেন রাজধানী ঢাকা শহরের শত শত বিল্ডিংয়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে হোটেল, রেস্টুরেন্ট। চোখ ধাঁধানো এসব রেস্টুরেন্টে আইন অমান্য করে এলোমেলো-বিশৃংখল ভাবে সিলিন্ডার ব্যবহার, যত্রতত্র সিলিন্ডার রাখায় ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজমান। যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পরে। অতএব অভিযান চালিয়ে অবৈধ হোটেল রেন্টুরেন্ট বন্ধ করতে হবে। শুরু হলো অভিযান। রাজউক, পুলিশ প্রশাসন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠান অভিযান চালিয়ে একের পর এক হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে। সরকারি যে সব প্রতিষ্ঠান রেস্টুরেন্ট বন্ধের অভিযানে নেমেছে তাদের মধ্যে নেই কোনো সমন্বয়। যে যেমন ভাবে পারছেন দায়িত্ব পালনের নামে হোটেল সিলগালা করে দিচ্ছেন। এমনও দেখা গেছে রাজউক থেকে আবাসিক বিল্ডিংয়ে পারমিশন নিয়ে ১০ থেকে ১৫টি করে চোখ ধাঁধানো রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করা হচ্ছে। হঠাৎ কেন এই হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধের অভিযান? মূলত বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে হোমরাচোমরা পরিবারের ৪৬ জনের মৃত্যুর পর এই রেস্তোরাঁ বন্ধের অভিযান শুরু হয়।
রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সহ-সভাপতি ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হচ্ছে অননুমোদিত অবৈধ ভবন, অবৈধ ভূমি ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদারকির অভাব। একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনে ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেস্তোরাঁ লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লাইসেন্স নিবন্ধন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দোকান লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ই-ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ফায়ার লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র। এসব ছাড়পত্র যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদারকি ছাড়াই দেয়া অথবা ছাড়পত্রহীনভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিরুদ্বেগ থাকার কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইনের ব্যত্যয় এবং তদারকির অভাবে ক্রমাগত ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী।
অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং আইন অমান্য করে এক বিল্ডিংয়ে কয়েকটি করে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা এবং যত্রতত্র সিলিন্ডার ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কিন্তু একদিনে কি এই হোটেল রেস্তোরাঁগুলো গড়ে উঠেছে? বিল্ডিং নির্মাণ এবং হোটেল ব্যবসা করতে কমপক্ষে ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নিতে হয়। নকশা, অগ্নি নিরাপত্তা, লোকেশন বিভিন্ন দিক দেখে বিবেচনা করে ছাড়পত্র দেয়া হয়। যারা এখন হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধে তৎপর হয়েছেন সরকারের সেই প্রশাসন যন্ত্রের ‘নাকের ডগায়’ আইন অমান্য করে এসব হোটেল ব্যবসা বছরের পর বছর ধরে চলছে। এতোদিন এসব অবৈধ হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলতে দেয়ার নেপথ্যের রহস্য কী? পর্দার আড়ালে সরকারের দায়িত্বশীলদের মাসোহারা বা এনাম দিয়ে ওই রেস্তোরাঁগুলো অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়েছে? একটি বিন্ডিংয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশাসনের কর্মকর্তারা সম্বিত ফিরে পেয়েছেন? রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, সারাদেশে মোট ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁয় প্রায় ৩০ লাখ কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)সহ সে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান অভিযানে হোটেল বন্ধ করছে তার অনেকগুলোর লাইসেন্স রয়েছে। হোটেল ব্যবসা বন্ধে অভিযানের নামে তুঘলকি চলছে। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর রেস্তোরাঁ শিল্পকে পথে বসিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে ব্যবসা তুলে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, রমজান মাসে সামর্থ্যবান পরিবারগুলো রাজধানীর চোখ ধাঁধানো হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে ইফতার সেহরি খেয়ে থাকেন। বেইলি রোড ট্র্যাজেডিকে ইস্যু করে হোটেল বন্ধ করে দিয়ে লাখ লাখ কর্মচারীকে বেকার করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে রমজানের সেহরি-ইফতারের ব্যবসা তুলে দেয়া হচ্ছে কিনা?
কয়েকদিন পর রোজা শুরু কারণ রাজধানীতে হাজার হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ যে সব বিল্ডিংয়ে রেস্তোরাঁ-হোটেল কেবল সে সবের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে। যেসব ঝুঁঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেখানে অভিযান হচ্ছে না কেন? এসব ভবনের সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কি রেহাই পেয়ে যাবে? আর এই অভিযান কতদিন চলবে? রমজান মাসে রেস্টুরেন্টগুলোতে একের পর এক অভিযানের কারণে রোজাদারদের ইফতার ও সেহরির খাওয়া নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হবে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর ঢাকায় ৪০টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১২টি লাইসেন্স থাকার পরও নবাবী রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান বলেছেন, অভিযানের নামে সারা ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে প্রশাসন তাণ্ডব চালাচ্ছে। যাদের দায়িত্ব এসব দেখভাল করার তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই এখন অভিযান চালানো হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়।
ড্যাপের সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার ভবনগুলোর মধ্যে ৮৮% ভবন অবৈধ। আর বাকি ১২% কোনো না কোনোভাবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। রাজউক এলাকায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট আছে।
ডিএমপির অভিযান চলবে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক থানার ওসিরা তৎপর হয়েছেন। প্রত্যেক এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ হোটেল-রেস্টুরেন্টকে আমরা চিঠি দিচ্ছি, সতর্ক করছি। তারপর অভিযান চালাচ্ছি। তবে এই ধরনের অভিযানের সমালোচনা করে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ত্রুটিপূর্ণ ভবনের তালিকা আছে। সেটা ধরে সরকারের ছয়-সাতটি সংস্থা যারা এর দায়িত্বে আছে তাদের সমন্বিত অভিযান দরকার। তা না হলে এই অভিযান তেমন কাজে আসবে না। এখন শুধু রেস্টুরেন্টে অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ তো আরও অনেক ভবন আছে। সেখানে অভিযান নেই কেন?
রেস্তোরাঁ মালিকদের সংবাদ সম্মেলন: অভিযানের নামে সারা ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে প্রশাসন তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া সমাধান নয়। গতকাল মঙ্গলবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘সাম্প্রতিক সময়ে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে রেস্তোরাঁ শিল্পে সংকটের উত্তরণের উপায় নিয়ে এবং আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করা’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। ইমরান হাসান বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির হাতে ব্যবসা তুলে দেয়ার জন্যই এখন প্রচেষ্টা চলছে। ফ্রোজেন ফুডের মাধ্যমে ২০-২৫ দিনের বাসী খাবার মানুষকে খাওয়ানোর জন্য তারা চেষ্টা চালাচ্ছে। সব সেক্টরেই ত্রুটি বিচ্যুতি আছে। কিন্তু বন্ধ করে দেয়া সমাধান নয়।
তিনি আরো বলেন, এখন অভিযান লোক-দেখানো। যাদের দায়িত্ব এসব দেখভাল করার তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই এখন অভিযান চালানো হচ্ছে। এতদিন তারা কোথায় ছিলেন? বিশ্বের সব দেশে সিলিন্ডার ব্যবহার হয়। তিতাস গ্যাস তো লাইনের অনুমোদন দিচ্ছে না। সিলিন্ডারকে প্রমোট করার জন্য লাইন দেয়া হচ্ছে না।
রেস্তোরাঁ খাতে মোট ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁয় প্রায় ৩০ লাখ কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই সেক্টরটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। বহু বছর ধরে রেস্তোরাঁ সেক্টরের সমস্যা নিয়ে সরকারি দপ্তর/ সংস্থা/কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি, মনিটরিং এর নামে শুধু হয়রানি চলছে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন, সরকার কর্তৃক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি টাস্কফোর্স গঠন করা। যার মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। একইসঙ্গে রেস্তোরাঁ সেক্টরের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইনও তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকায় ৪০টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১২টি লাইসেন্স থাকার পরও নবাবী রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি সাক্ষাতের সময় দিলে সব সমস্যা নিয়ে কথা বলা হবে। আর যদি সময় না দেন তাহলে সব চাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠিয়ে দেব। কারণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় প্রায় এক হাজার চিঠি দেয়া হয়েছে। আমাদের সমস্যার সমাধানে তারা সময় দেয় না।
পরিবেশবাদীরা বলছেন ৭ সংস্থা দায়ী : বিভিন্ন ভবনে অগ্নিকাণ্ড ও এসব ঘটনায় হতাহতের জন্য অনুমোদন দেয়া সাতটি সংস্থাকে দায়ী করেছেন পরিবেশবাদী তিনটি সংগঠন। আইনের ব্যত্যয় এবং তদারকির অভাবে ক্রমাগত ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো দায়ী। সরকারি সংস্থাগুলো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা (ওয়াসা, তিতাস, ডিপিডিসি/ডেসা), আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সর্বোপরি ভবনমালিক দায়ী। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ভবন বিপজ্জনকতায় আচ্ছন্ন নগরী: প্রেক্ষিতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা)। প্রতিষ্ঠানগুলো সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের দায়িত্বশীলদের অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছে।
নবাবী ভোজ ও সুলতান’স ডাইন সিলগালা: বেইলি রোড এলাকায় অভিযান চালিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অভিযানে নবাবী ভোজ ও সুলতান’স ডাইন নামের দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে অভিযান শুরু করেন রাজউকের কর্মকর্তারা। অভিযানের খবর পেয়ে নবাবী ভোজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেস্তোরাঁ বন্ধ করে সরে পড়েন। পরে রাজউকের অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা রেস্তোরাঁটি সিলগালা করে দেন। সরেজমিনে দেখা যায়, দুইতলা একটি ভবনের নিচতলায় নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁটি অবস্থিত। ভবনটির ওপরের তলায় পোশাকের একটি ব্র্যান্ডের শোরুম আছে।
সুলতান’স ডাইনের বিষয়ে রাজউকের কর্মকর্তারা বলেন, রেস্তোরাঁটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তবে তারা দাবি করেছেন, তাদের সব কাগজপত্র আছে। তাই আপাতত রেস্তোরাঁটি সিলগালা করা হয়েছে। কাগজপত্র দেখাতে পারলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গতকাল অভিযানে ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার নামের একটি ভবনের অগ্নিসুরক্ষার ছাড়পত্র হালনাগাদ না করায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার ভবনটির পরিচালক সারফুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সবকিছু ঠিক আছে। শুধু ফায়ারের ছাড়পত্র এখনো পাইনি। অভিযান পরিচালনাকারী রাজউকের অঞ্চল-৭-এর পরিচালক মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, রাজউক নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। শুধু রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে না। যেখানেই সমস্যা বা কোনো ব্যত্যয় পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর অনিরাপদ ভবন নিয়ে রাজউকের ঘুম কবে ভাঙবে জানতে চাইলে মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, রাজউক ঘুমিয়ে নেই। এর আগেও রাজউক নিয়মিত অভিযান চালিয়েছে। হয়তো সেটা গণমাধ্যমের চোখে পড়েনি
খিলগাঁওয়ে শুরুর দেড় ঘণ্টা পর স্থগিত অভিযান : খিলগাঁওয়ে শহীদ বাকি সড়কে থাকা রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকরা অভিযানের খবরে সেগুলো বন্ধ করে দেন। যে কারণে অভিযান শুরুর দেড় ঘণ্টা পর সেটি স্থগিত করে দিতে হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আভিযানিক দলকে। এরমধ্যে একটি ভবন সিলগালা করলেও খালি হাতে ফিরেছেন তারা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় খিলগাঁও এলাকার শহীদ বাকি সড়কে রেস্টুরেন্টসমূহে বিদ্যমান অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা তদারকির লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। দিনব্যাপী খিলগাঁও এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোয় অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও দুপুর একটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
প্রথম দফা মুলতবির পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফা অভিযান পরিচালনার জন্য খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ায় অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে যান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেখানে কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে চলে যায়। জানা গেছে, অভিযানিক দলের গাড়ি দেখে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি থাকা খিলগাঁও এলাকার দোকানগুলোর মালিকরা ‘ওই শাটার নামা’, ‘শাটার নামা’ বলে কর্মীদের দোকান বন্ধের নির্দেশ দেন। কর্মীরাও সেই নির্দেশ মেনে দোকান বন্ধ করে দেয়। এরপর হুড়মুড় করে সবাই বেরিয়ে যান।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।